আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস | কে ছিলেন আয়া নিকোলা | Real History Of Aya Nicola |

ভূমিকাঃ-   আমার পেইজের দর্শকরা আমাকে  আয়া নিকোলার ইতিহাস জানার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তাদের কথা রক্ষার্থে আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস ও বীরত্বের কথা গুলো তুলে ধরেছি, তাছাড়া, আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস জানার জন্য অধিকাংশ দর্শকদের আগ্রহ উদ্দীপনা দেখলাম, উসমানীয়া সাম্রাজ্যে আয়া নিকোলার সত্যিকারের পরিচয় আজ আমরা জানবো একেবারে রেফারেন্স সহকারে।  যেহেতু কুরুলুস উসমানে আয়া নিকোলা নামে একজন বাইজেন্টাইন কমান্ডারকে আলোকপাত করা হয়েছে, তাকে নিয়ে আজকের কন্টেন্ট তৈরী করেছি, এক নজরে পড়ে আসুন। তাহলে নিম্ন আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলো।  বিভিন্ন ইতিহাসবিদগণের দৃষ্টিকোণ থেকেঃ-  কিছু ঐতিহাসিকরা দাবি করেন যে আয়া নিকোলা ইনেগুলের টেকফুর ছিলেন। কিন্ত কিছু সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, তিনি একজন খ্রিস্টান সাধক ছিলেন। এজন্যই তুরস্কের অনেক গীর্জা ও শহরের নাম তার নামে রাখা হয়েছে এবং তার অনেক অলৌকিক ঘটনা খ্রিস্টান বইয়ে উল্লেখ আছে। সে সময়ের বিখ্যাত বাইজেন্টাইন ঐতিহাসিক জর্জ পাচিমেরেসের লেখা ইতিহাসে আয়া নিকোলার একটি সংক্ষিপ্ত  ভূমিকা আছে যে, তিনি ছিলেন ইনেগুলের টেকফুর।  শুধুমাত্র মুসলিম ঐতিতিহাসিকগণ তাদের রচনায় বিস্তারিতভাবে তার সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল ঐতিহাসিকরা উসমান গাজীর যুগকে "একটি ঐতিহাসিক কৃষ্ণগহ্বর" বলে। এবং এর কারণ হল ওসমান গাজী এবং অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থানের আদি ইতিহাস উসমানের মৃত্যুর একশ বছর পরে লেখা হয়েছিলো। আয়া নিকোলা কে ছিলেন এবং উসমান গাজীর সাথে তার কী সম্পর্ক ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে? আমরা এই উত্তরটি আসিকপাসাজাদের "তেভরিহ--আল- ওসমান" (Tevarih-i-Al-i Osman) বইতে খুঁজে পেতে পারি, যা অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসের জন্য একটি সত্যিকারের রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে। তার বইয়ে, আসিকপাসাজাদে "কাকির পিনারি" নামে একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন।  আয়া নিকোলার কৌশল ও উসমানের পরাজয়ঃ-  উসমান গাজীকে হত্যার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং এই পরিকল্পনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইনেগোলের টেকফুর আয়া নিকোলা। আসুন, আমরা ক্রমানুসারে ঘটনাগুলো জেনে আয়া নিকোলার ইতিহাস বুঝতে পারি। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে যখন কায়ী বসতি গ্রীষ্মে ডোম্যানিক এবং শীতকালে সুগুতে আর্তুগ্রুল গাজীর সুরক্ষায় বসবাস করতেন। ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে, যখন উসমান গাজী কায়ী উপজাতির নেতা হয়েছিলেন, আর্তুগ্রুল গাজী বিলেচিক টেকফুরের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। উসমান গাজীর আমলে টেকফুর তার ভাল উদ্দেশ্য গুলো বজায় রেখেছিলেন যিনি আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর কায়ীদের নেতা ( বেইম)  হয়েছিলেন। সেই সময় উসমানের বাইজেন্টাইন প্রতিবেশীদের সাথেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রকৃতপক্ষে, কায়ী উপজাতি যখন ডোম্যানিক এবং সোগুতের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল তখন তারা বিলেসিক টেকফুরের কারণে তাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে এমন চিন্তা করে নি।   অন্যদিকে, ইনেগুলের টেকফুর রাস্তা কেটে দেবে এবং তুর্কি মানুষের জিনিসপত্র ও  প্রাণীদের ক্ষতি করবে। সেজন্যে তিনি অন্যান্য টেকফুরদের সাথেও দেখা করবেন, উসমান গাজীর বিরুদ্ধে তাদের অসৎ ইচ্ছা ও শত্রুতার বিরুদ্ধে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং ডোম্যানিক এবং সোগুতকে ধরার পরিকল্পনা করবেন। ইনেগুলের টেকফুর অন্যান্য বাইজেন্টাইন টেকফুরদের সাথে একত্রিত হয়ে "ইউনাইটেড বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী" প্রতিষ্ঠা করেন। উসমান বে'র রাজত্ব একটি অত্যন্ত কৌশলগত এবং বিপজ্জনক বিন্দুতে অবস্থিত ছিল। সেই সময়ে উত্তরে বিলেচিক, ইয়েনিশেহির এবং লজনিকের দুর্গ, পূর্বে হারমানকায়া এবং কারাকাহিসার দুর্গ এবং পশ্চিমে ইনেগুল, কেস্টেল, বার্সা।  উসমান গাজী  ১২৮৪ সালে আয়া নিকোলা ও বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীর সঙ্গে  লড়াই করেছিলেন। এই যুদ্ধে উসমানের সাথে মাত্র ৭০ জন যোদ্ধা ছিল এবং বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী তাদের চেয়ে অনেক বড় ছিল। এই যুদ্ধে উসমান পরাজিত হন এবং তার ভাই সাভসি বেয়ের ছেলে বাইহোজা শহীদ হয়েছিলেন। যিনি উসমান গাজীর সেনাবাহিনীর অংশ ছিলেন, উসমানীয়া সাম্রাজ্যের প্রথম শহীদ হিসাবে বাইহোজাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উক্ত যুদ্ধকে বলা হয় এরমেনি-বেলি।  আয়া নিকোলার পরাজয় বরণঃ-  আয়া নিকোলার জীবনী টি আমি এখানে বর্ণনা করতে যাচ্ছি সামি বিন আবদুল্লাহ আল মাগলাউথের অ্যাটলাস এর সাহায্যে যা উক্ত বই থেকে নিয়েছি। ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দে তারা এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল যখন উসমান গাজী ৩০০ জন আল্পদের নিয়ে কুলুকাহিসার দূর্গে যাত্রা করেছিলেন, যা ইনেগুল থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে ছিল। উসমান গাজী রাতে দুর্গ আক্রমণ করেন এবং  তা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে কাফেরদের পরাজিত করে কুলুকাহিসার দুর্গটি জয় করেন। আয়া নিকোলা এই বিজয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং তুর্কি মুসলমানদের  রোমান দুর্গটি দখল করাটা সহ্য করতে পারেননি। আয়া নিকোলা কারাকাহিসার টেকফুরের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলেন  এবং দুজনেই তাদের জমি গুলো উসমানের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের হত্যা করবে , এমনি একটি প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করলেন।কিন্তু যখন যুদ্ধ শুরু হল, উসমান তার ছোট সেনাবাহিনী নিয়ে বাইজেন্টাইনকে পরাজিত করলেন এবং কারাকাহিসার দুর্গ জয় করলেন। এটিকে কারাকাহিসারের যুদ্ধ বলা হয় এবং এখানে উসমান দ্বিতীয়বার আয়া নিকোলার মুখোমুখি হন। আয়া নিকোলা তখন উসমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, যা আমি আগে উল্লেখ করেছি। কিন্তু হারামান'কায়া টেকফুর মিকাইল কোসেস, যিনি গোপনীয়তা রক্ষা করে উসমানের সঙ্গে বন্ধু হয়ে থাকতেন , তারও পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছিলো। এই মর্মে, ইয়ারহিসার টেকফুর এবং বিলেচিক তাদের সন্তানদের বিয়েতে উসমানকে আমন্ত্রণ জানান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উসমান যখন এখানে বিয়েতে আসবে তখন তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করা হবে। উসমান গাজী এই কথা শোনার সাথে সাথেই তিনি একটি পরিকল্পনা তৈরি করলেন। তিনি মহিলাদের পোশাক পুরোহিত ছদ্মবেশে তার চল্লিশ জন যুদ্ধা ক্যাসলে পাঠিয়েছিলেন। যখন এই যোদ্ধারা এসেছিল, তারা সমস্ত লোককে বন্দী করেছিল এবং দুর্গ জয় করেছিল।  তাদের মধ্যে  ইয়ারহিসার দুর্গের টেকফুরের মেয়ে ছিল যার নাম হল ফেরা। এই মেয়েটির নাম উসমান পরিবর্তন করে নিলুফার হাতুন রাখেন। উসমান তার নিজের ছেলে উরহানের গাজীর স্ত্রীর জন্য তাকে বেছে নিয়েছিলেন। এবং উরহানকে বিয়ে করার পর তাদের একটি পুত্র হয় যার নাম ছিলো মুরাদ অর্থাৎ প্রথম মুরাদ।  ডোম্যানিকের যুদ্ধঃ-  উসমান কারাকাহিসার এবং কুলুকাহিসার দুর্গ দুইটি জয় করার পর ইনেগুলের টেকফুর আয়া নিকোলাকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন, যিনি ইতিমধ্যে কারাকাহিসারের পূর্ববর্তী টেকফুরের সঙ্গে জোট করে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এটিকে ডোম্যানিকের যুদ্ধ বলা হয়।  ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ করা হয়েছিল, যেখানে উসমান বেয়ের ভাই সাভসি বে শহীদ হন। বাইজেন্টাইনদের চূড়ান্ত পরাজয়ের জন্য উসমান গাজী তুরগুত আল্পের নেতৃত্বে একটি সেনা পাঠান। পরে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং শহরটি জয় করেন। কথিত আছে যে, উসমান গাজী ইনেগুল শহরটি তুরগুত আল্প'কে দিয়েছিলেন   তুরগুত আল্পের গভর্নরশিপঃ-  ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে উসমান গাজী এই বীর সাহসী তুরগুত আল্প'কে ইনেগুলের গভর্নরশিপ হিসেবে নিযুক্ত করেন। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি ওসমান তাকে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং প্রজাদের মন জয় করেছিলেন। তিনি সেখানে ৩৬ বছর শাসন করেছেন, এবং সেই সময় মানুষ  শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করেছে। উক্ত অঞ্চলটিকে তুরগুত-ইলি (তুরগুতের ভূমি) নাম দেওয়া হয়। বুরসার অবরোধের সময়, মিগাল গাজীর সাথে তুরগুত আল্প ১৩২৫ সালে আট্রানোস ক্যাসেল (ওরহানেলি) বিজয়ে অংশ নিয়েছিল যা বুরসা বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।  নিকোলার মৃত্যুঃ-  আয়া নিকোলা কীভাবে মারা গেল তা ইতিহাস উল্লেখ করে নি, তাই আমরা এ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং লেখক হাসান এফে ডোম্যানিক গাজেটেসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ডোম্যানিক যুদ্ধ সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন যে "কেমালপাশাজাদে, আসিকপাসাজাদে, মুনেক্সিম বে এবং ইদ্রিস এল বিটলিসের মতো প্রথম প্রথম উৎসগুলো অটোমান সূত্রে এই যুদ্ধের কথা গুলো উল্লেখ করেছে"। আয়া নিকোলার ইতিহাস আমি রেফারেন্স সহকারে  উল্লেখ করেছি। আশা করি একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করবেন।   বিভিন্ন ইংরেজী ওয়েবসাইট থেকে আয়া নিকোলার ইতিহাস এর অংশ টুকু খুঁজে বের করেছি।  আপনারা আমার পেইজে ফলো করে সঙ্গেই থাকবেন     লেখাঃ- মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু   Page:- Hamidul Islam Raju  আরো পড়ুন উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন নিয়ে বিশেষ ব্যাক্তিদের জীবনী । তাই লিঙ্কে ক্লিক করুন।   বালা হাতুনের  স্বামী উসমানের জীবনী   ওরহান গাজীর জীবনীঃ-  আর্তুগ্রুল গাজীর জীবনীঃ-    উসমানের স্ত্রী বালা হাতুনের জীবনীঃ-   সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতানদের নামের তালিকাঃ-  তুর্কির আর্তুগ্রুল সিরিজ সহ কয়েকটি ইসলামীক সিরিজ দেখার পর একজন শিক্ষার্থীরঅনুভূতিঃ-  শায়েখ ইবনুল আরাবী'র পঞ্চাশটি বাণী ও উপদেশ ভিডিও সহঃ-  আর্তুগ্রুল গাজীর বাছাইকৃত চল্লিশটি বাণী ও উপদেশ ভিডিও সহঃ-  সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের বাণী ও উপদেশঃ-  সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাসুদ বিন কায়কাউস এর ইতিহাসঃ-  আইগুল হাতুনের দুঃখ দুর্দশা কেবল বাবা মা'র জন্য   দোগান আল্পের ইতিহাসঃ-
আয়া নিকোলা

 ভূমিকাঃ- 

আমার পেইজের দর্শকরা আমাকে  আয়া নিকোলার ইতিহাস জানার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, তাদের কথা রক্ষার্থে আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস ও বীরত্বের কথা গুলো তুলে ধরেছি, তাছাড়া, আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস জানার জন্য অধিকাংশ দর্শকদের আগ্রহ উদ্দীপনা দেখলাম, উসমানীয়া সাম্রাজ্যে আয়া নিকোলার সত্যিকারের পরিচয় আজ আমরা জানবো একেবারে রেফারেন্স সহকারে।  যেহেতু কুরুলুস উসমানে আয়া নিকোলা নামে একজন বাইজেন্টাইন কমান্ডারকে আলোকপাত করা হয়েছে, তাকে নিয়ে আজকের কন্টেন্ট তৈরী করেছি, এক নজরে পড়ে আসুন। তাহলে নিম্ন আয়া নিকোলার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হলো।

বিভিন্ন ইতিহাসবিদগণের দৃষ্টিকোণ থেকেঃ-

কিছু ঐতিহাসিকরা দাবি করেন যে আয়া নিকোলা ইনেগুলের টেকফুর ছিলেন। কিন্ত কিছু সুত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, তিনি একজন খ্রিস্টান সাধক ছিলেন। এজন্যই তুরস্কের অনেক গীর্জা ও শহরের নাম তার নামে রাখা হয়েছে এবং তার অনেক অলৌকিক ঘটনা খ্রিস্টান বইয়ে উল্লেখ আছে। সে সময়ের বিখ্যাত বাইজেন্টাইন ঐতিহাসিক জর্জ পাচিমেরেসের লেখা ইতিহাসে আয়া নিকোলার একটি সংক্ষিপ্ত  ভূমিকা আছে যে, তিনি ছিলেন ইনেগুলের টেকফুর।

শুধুমাত্র মুসলিম ঐতিতিহাসিকগণ তাদের রচনায় বিস্তারিতভাবে তার সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল ঐতিহাসিকরা উসমান গাজীর যুগকে "একটি ঐতিহাসিক কৃষ্ণগহ্বর" বলে। এবং এর কারণ হল ওসমান গাজী এবং অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থানের আদি ইতিহাস উসমানের মৃত্যুর একশ বছর পরে লেখা হয়েছিলো। আয়া নিকোলা কে ছিলেন এবং উসমান গাজীর সাথে তার কী সম্পর্ক ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে? আমরা এই উত্তরটি আসিকপাসাজাদের "তেভরিহ--আল- ওসমান" (Tevarih-i-Al-i Osman) বইতে খুঁজে পেতে পারি, যা অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসের জন্য একটি সত্যিকারের রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে। তার বইয়ে, আসিকপাসাজাদে "কাকির পিনারি" নামে একটি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন।

আয়া নিকোলার কৌশল ও উসমানের পরাজয়ঃ-

উসমান গাজীকে হত্যার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং এই পরিকল্পনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইনেগোলের টেকফুর আয়া নিকোলা। আসুন, আমরা ক্রমানুসারে ঘটনাগুলো জেনে আয়া নিকোলার ইতিহাস বুঝতে পারি। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে যখন কায়ী বসতি গ্রীষ্মে ডোম্যানিক এবং শীতকালে সুগুতে আর্তুগ্রুল গাজীর সুরক্ষায় বসবাস করতেন। ১২৮১ খ্রিস্টাব্দে, যখন উসমান গাজী কায়ী উপজাতির নেতা হয়েছিলেন, আর্তুগ্রুল গাজী বিলেচিক টেকফুরের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। উসমান গাজীর আমলে টেকফুর তার ভাল উদ্দেশ্য গুলো বজায় রেখেছিলেন যিনি আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর কায়ীদের নেতা ( বেইম)  হয়েছিলেন। সেই সময় উসমানের বাইজেন্টাইন প্রতিবেশীদের সাথেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রকৃতপক্ষে, কায়ী উপজাতি যখন ডোম্যানিক এবং সোগুতের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল তখন তারা বিলেসিক টেকফুরের কারণে তাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে এমন চিন্তা করে নি।

 অন্যদিকে, ইনেগুলের টেকফুর রাস্তা কেটে দেবে এবং তুর্কি মানুষের জিনিসপত্র ও  প্রাণীদের ক্ষতি করবে। সেজন্যে তিনি অন্যান্য টেকফুরদের সাথেও দেখা করবেন, উসমান গাজীর বিরুদ্ধে তাদের অসৎ ইচ্ছা ও শত্রুতার বিরুদ্ধে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং ডোম্যানিক এবং সোগুতকে ধরার পরিকল্পনা করবেন। ইনেগুলের টেকফুর অন্যান্য বাইজেন্টাইন টেকফুরদের সাথে একত্রিত হয়ে "ইউনাইটেড বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী" প্রতিষ্ঠা করেন। উসমান বে'র রাজত্ব একটি অত্যন্ত কৌশলগত এবং বিপজ্জনক বিন্দুতে অবস্থিত ছিল। সেই সময়ে উত্তরে বিলেচিক, ইয়েনিশেহির এবং লজনিকের দুর্গ, পূর্বে হারমানকায়া এবং কারাকাহিসার দুর্গ এবং পশ্চিমে ইনেগুল, কেস্টেল, বার্সা।  উসমান গাজী  ১২৮৪ সালে আয়া নিকোলা ও বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনীর সঙ্গে  লড়াই করেছিলেন। এই যুদ্ধে উসমানের সাথে মাত্র ৭০ জন যোদ্ধা ছিল এবং বাইজেন্টাইন সেনাবাহিনী তাদের চেয়ে অনেক বড় ছিল। এই যুদ্ধে উসমান পরাজিত হন এবং তার ভাই সাভসি বেয়ের ছেলে বাইহোজা শহীদ হয়েছিলেন। যিনি উসমান গাজীর সেনাবাহিনীর অংশ ছিলেন, উসমানীয়া সাম্রাজ্যের প্রথম শহীদ হিসাবে বাইহোজাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উক্ত যুদ্ধকে বলা হয় এরমেনি-বেলি।

আরো পড়ুনঃ- আর্তুগ্রুল গাজীর বাছাইকৃত চল্লিশটি বাণী ও উপদেশ ভিডিও সহঃ-

আয়া নিকোলার পরাজয় বরণঃ-

আয়া নিকোলার জীবনী টি আমি এখানে বর্ণনা করতে যাচ্ছি সামি বিন আবদুল্লাহ আল মাগলাউথের অ্যাটলাস এর সাহায্যে যা উক্ত বই থেকে নিয়েছি। ১২৮৫ খ্রিস্টাব্দে তারা এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল যখন উসমান গাজী ৩০০ জন আল্পদের নিয়ে কুলুকাহিসার দূর্গে যাত্রা করেছিলেন, যা ইনেগুল থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে ছিল। উসমান গাজী রাতে দুর্গ আক্রমণ করেন এবং  তা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে কাফেরদের পরাজিত করে কুলুকাহিসার দুর্গটি জয় করেন। আয়া নিকোলা এই বিজয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং তুর্কি মুসলমানদের  রোমান দুর্গটি দখল করাটা সহ্য করতে পারেননি। আয়া নিকোলা কারাকাহিসার টেকফুরের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলেন  এবং দুজনেই তাদের জমি গুলো উসমানের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের হত্যা করবে , এমনি একটি প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করলেন।কিন্তু যখন যুদ্ধ শুরু হল, উসমান তার ছোট সেনাবাহিনী নিয়ে বাইজেন্টাইনকে পরাজিত করলেন এবং কারাকাহিসার দুর্গ জয় করলেন। এটিকে কারাকাহিসারের যুদ্ধ বলা হয় এবং এখানে উসমান দ্বিতীয়বার আয়া নিকোলার মুখোমুখি হন। আয়া নিকোলা তখন উসমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল, যা আমি আগে উল্লেখ করেছি। কিন্তু হারামান'কায়া টেকফুর মিকাইল কোসেস, যিনি গোপনীয়তা রক্ষা করে উসমানের সঙ্গে বন্ধু হয়ে থাকতেন , তারও পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছিলো। এই মর্মে, ইয়ারহিসার টেকফুর এবং বিলেচিক তাদের সন্তানদের বিয়েতে উসমানকে আমন্ত্রণ জানান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উসমান যখন এখানে বিয়েতে আসবে তখন তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করা হবে। উসমান গাজী এই কথা শোনার সাথে সাথেই তিনি একটি পরিকল্পনা তৈরি করলেন। তিনি মহিলাদের পোশাক পুরোহিত ছদ্মবেশে তার চল্লিশ জন যুদ্ধা ক্যাসলে পাঠিয়েছিলেন। যখন এই যোদ্ধারা এসেছিল, তারা সমস্ত লোককে বন্দী করেছিল এবং দুর্গ জয় করেছিল।  তাদের মধ্যে  ইয়ারহিসার দুর্গের টেকফুরের মেয়ে ছিল যার নাম হল ফেরা। এই মেয়েটির নাম উসমান পরিবর্তন করে নিলুফার হাতুন রাখেন। উসমান তার নিজের ছেলে উরহানের গাজীর স্ত্রীর জন্য তাকে বেছে নিয়েছিলেন। এবং উরহানকে বিয়ে করার পর তাদের একটি পুত্র হয় যার নাম ছিলো মুরাদ অর্থাৎ প্রথম মুরাদ।

ডোম্যানিকের যুদ্ধঃ-

উসমান কারাকাহিসার এবং কুলুকাহিসার দুর্গ দুইটি জয় করার পর ইনেগুলের টেকফুর আয়া নিকোলাকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন, যিনি ইতিমধ্যে কারাকাহিসারের পূর্ববর্তী টেকফুরের সঙ্গে জোট করে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এটিকে ডোম্যানিকের যুদ্ধ বলা হয়।  ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ করা হয়েছিল, যেখানে উসমান বেয়ের ভাই সাভসি বে শহীদ হন। বাইজেন্টাইনদের চূড়ান্ত পরাজয়ের জন্য উসমান গাজী তুরগুত আল্পের নেতৃত্বে একটি সেনা পাঠান। পরে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং শহরটি জয় করেন। কথিত আছে যে, উসমান গাজী ইনেগুল শহরটি তুরগুত আল্প'কে দিয়েছিলেন 

তুরগুত আল্পের গভর্নরশিপঃ-

১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে উসমান গাজী এই বীর সাহসী তুরগুত আল্প'কে ইনেগুলের গভর্নরশিপ হিসেবে নিযুক্ত করেন। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটি ওসমান তাকে দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং প্রজাদের মন জয় করেছিলেন। তিনি সেখানে ৩৬ বছর শাসন করেছেন, এবং সেই সময় মানুষ  শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করেছে। উক্ত অঞ্চলটিকে তুরগুত-ইলি (তুরগুতের ভূমি) নাম দেওয়া হয়। বুরসার অবরোধের সময়, মিগাল গাজীর সাথে তুরগুত আল্প ১৩২৫ সালে আট্রানোস ক্যাসেল (ওরহানেলি) বিজয়ে অংশ নিয়েছিল যা বুরসা বিজয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

 আরো পড়ুনঃ- তুরগুত আল্পের প্রকৃত ইতিহাস এবং উরহানের উপদেষ্টা 

নিকোলার মৃত্যুঃ-

আয়া নিকোলা কীভাবে মারা গেল তা ইতিহাস উল্লেখ করে নি, তাই আমরা এ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারি না। ইতিহাসবিদ, গবেষক এবং লেখক হাসান এফে ডোম্যানিক গাজেটেসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ডোম্যানিক যুদ্ধ সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন যে "কেমালপাশাজাদে, আসিকপাসাজাদে, মুনেক্সিম বে এবং ইদ্রিস এল বিটলিসের মতো প্রথম প্রথম উৎসগুলো অটোমান সূত্রে এই যুদ্ধের কথা গুলো উল্লেখ করেছে"। আয়া নিকোলার ইতিহাস আমি রেফারেন্স সহকারে  উল্লেখ করেছি। আশা করি একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করবেন। 

বিভিন্ন ইংরেজী ওয়েবসাইট থেকে আয়া নিকোলার ইতিহাস এর অংশ টুকু খুঁজে বের করেছি।  আপনারা আমার পেইজে ফলো করে সঙ্গেই থাকবেন

 

আমার ফেসবুক আইডিটি ফলো করে সঙ্গে থাকুুন ।


আরো পড়ুন উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন নিয়ে বিশেষ ব্যাক্তিদের জীবনী । তাই লিঙ্কে ক্লিক করুন। 

বালা হাতুনের  স্বামী উসমানের জীবনী 

ওরহান গাজীর জীবনীঃ-

আর্তুগ্রুল গাজীর জীবনীঃ-  

উসমানের স্ত্রী বালা হাতুনের জীবনীঃ- 

সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতানদের নামের তালিকাঃ-

তুর্কির আর্তুগ্রুল সিরিজ সহ কয়েকটি ইসলামীক সিরিজ দেখার পর একজন শিক্ষার্থীরঅনুভূতিঃ-

শায়েখ ইবনুল আরাবী'র পঞ্চাশটি বাণী ও উপদেশ ভিডিও সহঃ-

আর্তুগ্রুল গাজীর বাছাইকৃত চল্লিশটি বাণী ও উপদেশ ভিডিও সহঃ-

সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের বাণী ও উপদেশঃ-

সুলতান গিয়াস উদ্দিন মাসুদ বিন কায়কাউস এর ইতিহাসঃ-

আইগুল হাতুনের দুঃখ দুর্দশা কেবল বাবা মা'র জন্য 

দোগান আল্পের ইতিহাসঃ-

Post a Comment

0 Comments