তুর্কির আর্তুগ্রুল সিরিজ সহ কয়েকটি ইসলামীক সিরিজ দেখার পর একজন শিক্ষার্থীর অনুভূতি।

 তুর্কিশ ইসলামিক সিরিজ

মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু 

আমি একজন শিক্ষার্থী বর্তমানে সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে ফাইনাল ইয়ারে অধ্যয়নরত আছি। আমি লেখালেখি করতে সাচ্ছন্দ বোধ করি , মনের ভাষাকে গল্পের মাধ্যমে কিংবা কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করি এবং বিগত পাচ বছর যাবৎ বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় পেইজ গুলোতে লেখনি প্রচার করে আসতাম, এবং পাঠক বর্গের কাছ থেকে পর্যাপ্ত উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেতাম। যদিও কখনো এতো লম্বা সিরিজ দেখার সময় হাতে ছিলো না কিংবা মুভি দেখে সময় নষ্ট করার চেষ্টা পর্যন্ত করিনি, এবং কোনো সিরিয়ালের প্রতি এতো আগ্রহ ছিলো না, যতটা আগ্রহ ও মনোযোগ দিয়ে দিরিলিস আরতুগ্রুল দেখেছি , এই সিরিয়ালটা পাচ সিজনেই সমাপ্তি যার পর্ব সংখ্যা ১৫০।

তারপর কয়েকদিন পর শুরু হলো কুরুলুস উসমান, অর্থাৎ আর্তুগ্রুলের ছেলে উসমান, যিনি উসমানীয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৎকালীন সময়ে,, চলমান সিরিজটা প্রায় ৪২ পর্ব পর্যন্ত রিলিজ হয়েছিলো, তবে কতো ভলিউম পর্যন্ত সমাপ্তি ঘটবে এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে, একজন দর্শকের মতো উক্ত সিরিজটা দারুন আগ্রহ সহকারে উপভোগ করছি । 

প্রতি সপ্তাহে অর্থাৎ বুধবার রাতে ATV ইউটিউব চ্যানেলে রাত ১২:০০ ঘটিকার সময় সরাসরি সম্প্রচার করা হয় তুর্কিশ ভাষায়, অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতাম প্রতিটি পর্ব দেখার জন্য। দিরিলিস আরতুগ্রুল সিজন ১ ও ২ বাংলা ডাবিং করা হয়েছে মাছরাঙ্গা চ্যানেলের সহায়তায়।

Dirilis Ertugrul Gazi

প্রথমে বাংলা ডাবিং দেখা শুরু করেছিলাম, সিজন ৩ -এ বাংলা ডাবিং নেই তাই মন খারাপ করে বসেছিলাম, বাকী পর্ব কীভাবে দেখবো সেই আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে, হঠাৎ একদিন আযমি পথিক নামে একটা ফেসবুক পেইজ সিজন ৩ থেকে বাংলা সাবটাইটেল করবে বলে পোস্ট দিয়ে লক্ষাধিক দর্শকদের আশ্বাস দিয়েছিলো। সকলেই তাদের প্রশংসায় বিমুখ ছিলো। 

যদিও বাংলা সাবটাইটেলের প্রতি তেমন আগ্রহবোধ ছিলো না, তাই দর্শকদের এতোটাই উৎসাহ উদ্দীপনা দর্শন করলাম যার জন্য আমিও একের পর এক পর্ব গুলো দেখা শুরু করলাম। ধৈর্য্য সহকারে প্রতিটি পর্বের অপেক্ষায় থাকতাম। যদিও বর্তমানে কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে অতপ্রোতভাবে সম্পর্ক হয়েছিলো, আমাকে বিভিন্ন পেইজ ও গ্রুপ থেকে দিরিলিস আর্তুগ্রুল ও কুরুলুস উসমান সম্পর্কে লেখালেখি করার জন্য অফার করেছিলো দু একটি গ্রুপ ব্যাতিত সময় স্বল্পতার কারণে অন্য গ্রুপে নিজের লেখনী উপস্থাপন করতে পারিনি, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকেই আমার লেখনি গুলো কপি পেস্ট করে বিভিন্ন গ্রুপে নিজের নাম ব্যবহার করে চালিয়ে দেয় তবুও মনকে এই বলে শান্তনা দেই , ভালো কথা গুলো প্রচার হোক মুসলমান ভাইদের কাছে । সেটা আমার পেইজ থেকে কিংবা অন্য কারো আইডি থেকে । কয়েকজন দর্শকের উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আমার পেইজ থেকে উক্ত সিরিজ সংক্রান্ত তথ্যবলী ও সত্য ঘটনা সংগ্রহ করে যেদিন থেকে লেখনী প্রচার করলাম সেদিন থেকে একের পর এক দর্শক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা সত্যিই আমার জন্য অনেক আনন্দের ও সৌভাগ্যের বিষয়, আরো সৌভাগ্যের বিষয় হলো প্রতিদিন সবাই আমার পোস্টে মন্তব্য করে আমাকে প্রেরণার তালিকায় উদ্বুদ্ধ করে থাকেন, সেইসব প্রিয় দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা পূর্ণ মনোভাব চির অটুট থাকুক। 

আমি আইন বিষয় নিয়ে পড়ছি, কখনো ইতিহাস নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি করিনি কিন্তু এই এক বছরে মুসলমানদের ইতিহাস সম্পর্কে যা জানলাম, আসলেই ইসলামটা সহজেই প্রতিষ্ঠিত হয় নি, ইসলামটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সেইসব বীর পুরুষদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, যারা নিজেদের পেশি শক্তিকে বাতিলের সঙ্গে লড়াই করেছে, রক্তে রঞ্জিত হয়েছে , বারবার তীর ও তরবারির আঘাত সহ্য করতে হয়েছে তথাপি কখনো বাতিলের সম্মুখে মস্তক নত করে নি। যেখানে যুদ্ধের প্রয়োজন সেখানেই যুদ্ধ করে অসহায়দের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, যেখানে নাইট, ক্রুসেডার ও মঙ্গোলবাহিনী দ্বারা নির্যাতিত ও নিপিড়িত হয়েছে সেখানে একজন বীর পুরুষের নেতৃত্বে উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে জিহাদ করে তাদের মাথার উপর দূর্গ গুলো ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা মুসলমানদের রক্তে গোসল করেছে , মুসলিমদের অমানুষিক নির্যাতন করেছে কিন্তু তারা জানতো না এই রক্তে তারাই ডুবে মরে যাবে,, এভাবে ধীরে ধীরে যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো, ইসলামের বিজয় সুনিশ্চিত হলো। ধারাবাহিক ভাবে অমুসলিমরা মুসলমানের সততা, আদর্শ, ন্যায়পরানতা, উত্তম চরিত্র, ও উৎকৃষ্ট নৈতিক ব্যবহারমালা দেখে দলবদ্বভাবে ইসলাম গ্রহন করতে শুরু করে দিলো। এভাবেই মধ্য যুগ থেকে ইসলামের অগ্রযাত্রা ও গণহারের মুসলমানদের সংখ্যা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। মুসলমানরা যুদ্ধ করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য , হাত দিয়ে তরবারী ধরে শক্তির জোরে নয়, বরং ঈমানী শক্তি ও মনের জোর নিয়ে। যুদ্ধ করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য নয়, বরং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। যুদ্ধ করার পূর্বেই জানে যেকোনো একটা তীর শরিরে লাগতে পারে কিংবা জীবনটা আকস্মিক মহা বিপদে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তারপরও মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। মহাবীর আর্তুগ্রুল গাজী যুদ্ধ করতে গিয়ে সৈন্যদের সবসময়ই বলতেন, "যুদ্ধ আমাদের, বিজয় আল্লাহর"। এই কথা বলে তিনি যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তেন! যতক্ষণ পর্যন্ত বিজয় না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন। 

 তিনি সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের ছোট ভাই শাহজাদা নোমানের মেয়ে শাহজাদী হালিমা সুলতানার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাদের তিনটে বীর সাহসী ছেলে ছিলো, গুন্দুজ বে, সাবচি বে, এবং সবশেষে "উসমান বে" ! আর্তুগ্রুল গাজীর ছোট্ট ছেলে উসমান ছিলো একজন বীর সাহসী অকোতভয় সেনা! শৈশব থেকে উসমান গাজি তীর চালনায় পারদর্শী ছিলেন, সেই ছোট্ট বেলায় গোপনে গোপনে তীর দিয়ে তিনি ক্রোসেডার ও নাইটদের তীরবিদ্ব করে হত্যা করতেন, ছোট্ট বেলায় যুদ্বের ময়দানে অসাধারণ যুদ্ধকৌশল দেখিয়েছিলেন। তার একান্ত সাহস ও মনের শক্তি ছিলো প্রখর। এবং মহাবীর আর্তুগ্রুল গাজী তার ছোট্ট ছেলে উসমানের সাহসিকতা ও সততা , ন্যায়পরাণতা এবং দায়িত্ববোধ দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আর্তুগ্রুল গাজীর এই ছোট্ট ছেলে উসমান একদিন অনেক বড়ো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে , সেটা হয়তো আর্তুগ্রুল গাজী পূর্বে থেকে কিছু নিদর্শনা পেয়েছিলেন ইবনুল আরাবীর কাছ থেকে। এবং তৎকালীন সময়ে উসমান গাজী সেই সাম্রাজ্যের নাম দিয়েছিলেন , " উসমানিয়া সাম্রাজ্যে '' যা উসমানের সময় থেকে মুসলিম শাসকগণ ৬২৩ বছর রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। 

 আমি যেভাবে দিরিলিস আরতুগ্রুল দেখা শুরু করেছিঃ

তখন ২০১৮ সাল, পড়াশুনার জন্য বছর পাঁচেক ধরে সিলেট শহরেই থাকতাম। সহপাঠি বন্ধুদের সঙ্গী হয়ে একটা ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করেছি, সেখানে দীর্ঘ বছর অতিবাহিত করেছি, মাসে একবার বাড়িতে যাতায়াত করতাম। মন না চাইলেও যেতাম। দীর্ঘ রজনীর পর রজনী শেষে স্বীয় বাড়িতে পরিদর্শন করলে মনে হতো, ফুলের বাগানে ভ্রমণ করে হৃদয়ে শান্তনা খুঁজে পাচ্ছি।

 এমনি করে একদিন বাড়িতে আসলাম, প্রায় সময় রাস্তা ঘাটে আশে পাশে পরিচিত বন্ধু , ভাই ও রিলেটিভ সেক্টরের যত গুলো মানুষ ছিলো, প্রত্যেকের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে ভালো মন্দ আমাকে জিজ্ঞেস করতো , খানিকক্ষণ কথা চালিয়ে যাওয়ার পর আবারো সালাম বিনিময় করে বিদায় নিয়ে বাড়িতে আসতাম। বাড়িতে আশার পর আমাকে দেখে সকলের মুখে আনন্দ ও উল্লাসের চাহনি দেখলাম! কী অদ্ভুত হাসি, সকলের চেহারায় দৃশ্যমান হাসি দেখে নিজের মনে স্বস্তি খুঁজে পেতাম। আমার রুমে আসলাম , মাস খানেক পর রুমের সঙ্গে পরিচয় খুঁজে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগলো, বিছানার এক পাশে বসে ছোট্ট একটা ভাই মাহিদুল ইসলাম সাউন্ড দিয়ে মুভি দেখছে! এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোবাইলের স্ক্রিনে দিকে। আমি যে বাসায় আসছি এদিকে তার কোনো খেয়ালই ছিলো না। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কী রে কী করছিস, সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকিস কেনো? সে তো মোবাইলের দিকেই তাকিয়ে আছে , কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমিও তার এক পাশে বসে মোবাইল চালাচ্ছি, একটু আধটু লেখালেখি করছি, বিভিন্ন পেইজে ওয়েবসাইটে নিজের লেখনী প্রচার করতাম। টানা তিনদিন অতিবাহিত করেছি, সে তিনদিনই দেখলাম সে মোবাইল দিয়ে মুভি দেখছে, কী মুভি জিজ্ঞেস করতেই "" একের পর এক কথা বলতে শুরু করলো, এটা ইসলামিক মুভি, তুরস্কে নির্মিত আর্তুগ্রুল গাজীর জীবন নিয়ে নির্মিত একটা সিরিজ...................... ইত্যাদি ইত্যাদি ।

 -আর্তুগ্রুল গাজীটা আবার কে? 

- সে উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্টাতা প্রথম উসমানের বাবা!

 যদিও ছোট্ট বেলায় উসমানীয়া সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন নিয়ে একটা বই পড়েছিলাম, কিন্তু এতো কিছু মনে ছিলো না কিংবা এতো আগ্রহ নিয়ে ইতিহাস পড়া হয় নি। 

তাই আর তার সাথে এই ব্যাপারে কথা বেশি না বাড়িয়ে স্থানচ্যুত করে অন্য কাজে মনোযোগ দিতে লাগলাম।

 কিছু দিন পর হোস্টেলে আসলাম , মাসে খানেক পর আবারো বাড়িতে গেলাম, পূর্বের মতো তাকেও দিরিলিস আর্তুগ্রুল সিরিজ দেখার মধ্যে পেলাম। 

- কি রে এখনও কী তোর সিরিজ দেখা শেষ হয় নি? 

-আরো কয়েকটি পর্ব বাকী আছে, মিনিমাম দশ পনেরদিনের ভেতরে শেষ হয়ে যাবে ভাই।

- ওহ আচ্ছা, তাহলে দেখতেই থাক।

কী আজব মানুষ আমি আমার লাইফে এরকম একগুয়ে মানুষ দেখিনি , একটানা একটা সিরিজ নিয়েই পড়ে আছে , তখন অনেক বিরক্ত বোধ করলাম। মনে মনে ভাবলাম, কী এমন সিরিজ যে খাওয়া দাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে এই সিরিজ দেখে আমার ছোট্ট ভাইটি। 

 আর আর্তুগ্রুল গাজী কে এমন মানুষ? প্রথমে উনার ইতিহাস সম্পর্কে আমাকে জানতেই হবে, গুগলে সার্চ করতেই আর্তুগ্রুল গাজীর ইতিহাস উইকিপিডিয়া নামে একটা ওয়েবসাইটে পেলাম, পড়তেই থাকলাম। মনে মনে ভাবলাম, এই সিরিজটা কোথায় দেখতে পাবো, ইউটিউবে সার্চ করলাম, তুর্কি ভাষায় TRT Channel এ আসলো তা ও তুর্কিশ ভাষায় । আমার ভাই যে বাংলা ভাষায় দেখে এটা কীভাবে পাই। আর ছোট্ট ভাইকে কী করে বলি এই সিরিজ আমি দেখতে চাই। এসব ভেবে ভেবে আর দেখা হলো না কিছু দিন পর আগের নিয়মে বাড়ি থেকে সবার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে হোস্টেলে গেলাম। হোস্টেলে অবসর সময়ে একটা কবিতা লিখতে বসলাম, একটা অদ্ভুত অনুভূতি মনের ভেতরে আসলো , সেখান থেকে দেশাত্মক বোধক একটা কবিতা লিখতে বসলাম। হঠাৎ করে আমার সেই ছোট্ট ভাই মেসেঞ্জারে knock করলো। দেখলাম দিরিলিস আরতুগ্রুল সিরিজ প্রথম থেকে পঞ্চম সিজন অর্থাৎ মোট ১৫০ টি পর্ব আমাকে দিলো। যদিও মনে মনে অনেকদিন খুজে ছিলাম তথাপি তাকে বুঝতে দেয় নি, আসলে আল্লাহ পাক মানুষের মনের আশা পূরণ করেন যদি সে চাওয়ার মতো চায় এসব ভেবে ভাইটার উপর কি খুশি না হয়েছি, তা বলে বুঝাতে পারবো না। 

শুরু হলো প্রথম পর্ব দেখা, কবিতার অর্ধেক অংশ লিখতে না লিখতেই প্রথম পর্বে ক্লিক করলাম । ত্রিশ মিনিটের মতো দেখা শেষ করে রাত তখন সোয়া নয়টা, খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম আর খাওয়ার টেবিলে সিরিজের কিছু চরিত্র আর আর্তুগ্রুল গাজীর সাহসীকতা, সহনশীলতা এবং ন্যায়পরানতা দেখে আমি বিমুগ্ধ হয়েছিলাম। আর সেলজুক সাম্রাজ্যের শাহজাদী হালিমা সুলতানাকে নাইটদের অর্থাৎ কাফেদের হাত থেকে বামসী বে, দোআন আল্প ও তুরগুত বে আর্তুগ্রুল গাজীর তিন বন্ধু মিলে সাহসী যোদ্ধাদের মতো যুদ্ধ করে রক্ষা করেছিলো সেই দৃশ্য তখন চোখের সামনে স্পষ্ট দৃশ্যমান ছিলো। আর খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় একাকার হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে পরের অংশ থেকে দেখা শুরু করলাম । দেখতে দেখতে রাত তখন সারে চারটা বেজে গেলো, একদমই খেয়াল করতে পারি নি। 

 দেখতে দেখতে চার পর্ব প্রায় শেষ হতে না হতেই ঘুমের ঘরে হারিয়ে গেলাম। সকাল হলো নাস্তা শেষ করেই আবারো দেখা শুরু করলাম শুধু মাত্র নামাজের সময় বিরতি দিতাম। তারপর একটানা দেখতে থাকলাম। এমনি করে দেখা শুরু হলো, আর মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু কল নায়ক আসে, যেমন ধরো বসতির বিশ্বাস ঘাতক কুরতুগ্লু, তার মৃত্য দেখার জন্য আটাশ পর্ব পর্যন্ত একটানা দেখলাম । অবশেষে আর্তুগ্রুলের হাতে বিশ্বাসঘাতক চাচা কুরতুগ্লুর মৃত্যু হয়েছে। তারপর কলনায়ক নয়ান, সাদেত্তিন কোপেক, আরিকবোকা, আলবাস্তি, সহ এভাবে ধারাবাহিক ভাবে আরো অনেকেই আসলো সকলের মৃত্যু কীভাবে আর কেমন নৃশংসভাবে হবে, সেটি দেখার জন্য টানা দুইমাসে দিরিলিস আর্তুগ্রুল সিরিজটি দেখা সমাপ্ত করলাম, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে পারলাম না। 

কেননা এতো দীর্ঘ সময় নিয়ে সিরিজ এই প্রথমবার দেখলাম। সমাপ্ত হওয়ার পর কিছুদিন পর কেমন যেনো নিজেকে অসহায় আর অপূর্ণ মনে হচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো। তার কিছু দিন পর কুরুলুস উসমান atv তে channel e পাবলিশ হয়েছে , এই সিরিজটি চলমান আছে কতো পর্বে বিস্তৃত হবে সেটা অজানা । এরপর সেলজুক সাম্রাজ্যের নিয়ে নির্মিত সিরিজ উয়ানিস বুয়ুক সেলজুকলুর চলমান পর্ব গুলোও দেখা শুরু করেছি, ধীরে ধীরে সিরিজ গুলোর মধ্যে দিয়ে ইতিহাস ভিত্তিক বইয়ের দিকেও খুব ভালো নজরদারি করতে বসলাম। দারুন আগ্রহের ইসলামের মধ্যযুগ ও প্রাচীন যুগের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বই পড়তে শুরু করলাম।

 একটি স্বপ্ন!! একটি সম্রাজ্যের গোড়াপত্তন উসমান গাজীর সেই ঐতিহাসিক স্বপ্ন যা পায়িতাথ আব্দুল হামিদ সিরিজে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে!! 

 স্বপ্ন বিশ্লেষণঃ উসমানের নামানুসারেই এই সাম্রাজ্যকে উসমানীয় সাম্রাজ্য বা অটোমান সাম্রাজ্য বলা হয়।"উসমানের স্বপ্ন" নামের একটি কিংবদন্তীর কথা বলা হয়ে থাকে যার মাধ্যমে তরুণ উসমান পরবর্তীতে একটি সাম্রাজ্য তৈরি করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তার স্বপ্ন অনেকটা এমন ছিল যে, সাম্রাজ্য হলো একটি বড় গাছ যার শিকড় তিনটি মহাদেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং যার শাখাগুলি আকাশকে আচ্ছাদিত করেছিল।তার স্বপ্নমতে, উসমানের সাম্রাজ্যটি ছিল সেই গাছ, যার শিকড় থেকে চারটি নদী-টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস, নীল এবং দানিউব জারি করেছিল। উপরন্তু, গাছটি চারটি পর্বতশ্রেণী, ককেসাস, তোরোস, এটলাস এবং বলকান রেঞ্জকে ছায়ায় আচ্ছাদিত করেছে। 

 আরতুগ্রুল গাজীর এর বিখ্যাত উক্তিঃ যা সর্বকালের সেরা উক্তি নামে পরিচিত। 

 ১। শেয়ালের রাজত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষন নেকড়েরা ঘুমিয়ে থাকে 

২। সত্যিকারের বীর পুরুষ কখনও চোখ নামিয়ে কথা বলে না। 

৩। হুকুম দেবেন সুলতান, শাহদাত দেবেন আল্লাহ। 

৪। যার কোনো স্বপ্ন নাই, তার কোনো ভবিষ্যৎও নাই।

 ৫। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যদি পুরো পৃথিবীকে বিরক্ত করতে হয়, আমি পুরো পৃথিবীকে বিরক্ত করবো। 

৬। যদি আমি অত্যাচারীদের না থামাতে পারি, তাহলে না আমি সেনা, না আমি বীর পুরুষ। 

৭। একজন বীর পুরুষের দৃষ্টি তরবারীর চেয়ে ধারালো।

 ৮। অন্ধ বিশ্বস্ততা বাস্তবতার বড় শত্রু

 ৯। আমি মাজলুমকে সাহায্য করবোই, যদিও সে আমার শত্রু হয়। 

১০। বাবা এমন একটি আশ্রয়, শীতকালে যে নিজে ঠান্ডায় থাকে কিন্তু সন্তানদের ঠান্ডায় থাকতে দেয় না। কারণ একজন বাবার হৃদয়ে প্রজ্জ্বলিত আগুনই তার সন্তানকে উষ্ণতা দান করে। বাবা ছাড়া যদি তুমি সব পেয়ে যাও, তবুও মনে হবে তোমার কোথায় একটি ঘাটতি রয়ে গেছে, আর যদি তোমার একজন বাবা থাকে তাহলে তোমার কোনো

কিছুর ঘাটতি মনে হবে না। বাবা হলো বট বৃক্ষের ন্যায় সে ফল না দিলেও তার ছায়ায় যথেষ্ঠ। 

১১। যুদ্বের ময়দানে যখন সিংহ থাকে না তখন খচ্ছর নিজেকে সিংহ ভাবতে শুরু করে। 

১২। আমার শহীদি মৃত্যু যদি মেনে নিতে না পারো তাহলে আমার সামনে কোনো দিন এসো না (নিজের স্ত্রীকে)

 ১৩। আমাদের পুর্বপুরুষদের ইতিহাস বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর জন্য নয়, বরং পুরুষদের বীরত্ব জাগানোর জন্য শোনানো হয়। দুর্গজয় এবং সিংহাসন লাভ উদ্দেশ্য নয়, আমাদের ঝান্ডা আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য। 

১৪। হতাশা আমাদের জন্য হারাম, কারণ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবার কোনো হক্ব আমাদের নাই। 

১৫। সত্য পথের পথিককে আমার আল্লাহ কখনো একা ছেড়ে দেন না। 

১৬। সারা দুনিয়া বিরুধী হয়ে গেলেও আমরা জালিমদের সমর্থন দিতে পারি না। 

১৭। আজ যদি আমরা ভয়ে কাপুরুষতার চুড়ি পড়ি, তাহলে আমাদের প্রজন্ম জালিমদের ভয়ে কাঁপতে থাকবে। 

১৮। দুটি হাত আমরা কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দিই না। বন্ধু হলে মিলিয়ে নিই আর শত্রু হলে কেটে দেই। 

১৯। দুনিয়াতে জুলফিকারের মত কোনো তলোয়ার নাই আর আলী রা. এর মত কোনো বাহাদুর নাই।

 ২০। প্রচেষ্টা আর পরিশ্রম আমাদের, আর সাফল্য আল্লাহর হাতে। 

২১। আমি গাদ্দারকে মাফ করবো না যদিও সে আমার ভাই হয়। 

- আরতুগ্রুল গাজী - Ertugrul Gazi

আমার পেইজে ফলো করতে পারেন হামিদুল ইসলাম রাজু

আর্তুগ্রুল গাজীর জীবনী পড়তে নিচে ক্লিক করুন। 

আর্তুগ্রুল গাজী ১ 

আর্তুগ্রুল গাজী ২

আর্তুগ্রুলের ছেলে উসমানের জীবনী

উসমানের স্ত্রী রাবেয়া বালা হাতুনের জীবন বৃত্তান্ত 



Post a Comment

0 Comments