উসমানের ছেলে দ্বিতীয় সুলতান ওরহান গাজীর জীবনী ও যুদ্ধ কৌশল। Orhan Gazi জন্ম- মৃত্যু (১২৮১- ১৩৫৯)

ওরহান গাজীর জীবন বৃত্তান্ত 

জন্মস্থান ও পরিচিতিঃ-  উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শাসক ওরহান গাজীর বাবা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্টাতা প্রথম উসমান ও এবং মা ছিলেন ওমর বে'র কন্যা মালহুন হাতুন। তিনি ১২৮১ সালে সুগুতে  জন্মগ্রহণ করেন।   আমীর উসমানের সুযােগ্য পুত্র ছিলেন ওরখান। ১৩২৬ খৃষ্টাব্দে তিনি বুরসার মসনদে বসেন। তিনি 'সুলতান উপাধি ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে, তার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা দর্শন করে উসমানই তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে যান।    ওরহান গাজীর স্ত্রী: নীলুফার হাতুন, অ্যাস্পোরকা হাতুন, থিওডোরা হাতুন, ইফ্টানডিস হাতুন।   তাঁর পুত্র ছিলো: সুলায়মানপাশা, মুরাদ, ইব্রাহিম, হালিল, কাসিম।   এবং তাঁর একটি মাত্র কন্যা সন্তান ছিলো যার নাম ফাতেমা হাতুন।   গঠন ও চরিত্রঃ   ওরহান গাজী কায়ী বংশের সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন।   তিনার লম্বা, স্বর্ণালম্বী দাড়ি এবং নীল চোখ ছিল। তিনি ছিলেন সৌম্য, ক্ষমাশীল, ধার্মিক ও ন্যায় বিচারক। তিনি ধর্মতত্ত্ববিদদের প্রশংসা করেছিলেন। তার দুই বাহুর পেশি শক্তি ছিলো দক্ষ, তরবারী চালনায় পারদর্শী ছিলেন এবং ধৈর্যশীল স্বভাবের ছিলেন। তিনি তাঁর বেশিরভাগ সময় কায়ী লোকদের সাথে সময় কাটাতেন, কিংবা তাদের সাথে দেখা করে সময় অতিবাহিত করতেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই  প্রশংসায় বিমুখ ছিলেন ।  বিবাহ বন্ধন ও দূর্গ জয়ঃ-  ওরহান গাজী ১৩২৬ সালে ওসমান গাজীর মৃত্যুর পরে কায়ী গোত্রের নেতা হন। তিনি ১৩৪৬ সালে বাইজেন্টাইন এগারোতম সম্রাট ইওনিস কনটাকুজিনাস  কন্যা তিউডোরার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।   তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়োহিসারের বাইজেন্টাইন প্রিন্সের মেয়ে হোলোফীরা ছিলেন। হোলোফিরা বিলেসিকের রাজপুত্রের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে ওরহান গাজীর হাত ধরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এরপর ওরহান গাজীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং তাঁর নাম নীলুফার হাতুন হিসাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। তিনি মুরাদকে জন্ম দিয়েছিলেন, যিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের তৃতীয় সুলতান হিসেবে পরিচিত। তিনি বাইজেন্টাইন সম্রাট তৃতীয় অ্যান্ড্রোনিকাসকে পরাজিত করেছিলেন এবং নিকিয়া এবং ইজমিট সহ এশিয়া মাইনরের বিশাল অংশ জয় করেছিলেন।   সুলতান উসমানের মতােই বীরযােদ্ধা ছিলেন ওরহান। ১৩২৭ খৃষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা তৃতীয় এন্ড্রোনিকাস এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ওরহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। পেলিকানন প্রান্তরে ওরহান তাঁর মুখােমুখি হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গ্রীস-রাজ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ওরখান স্বসৈন্য নাইসিয়া প্রবেশ করেন। নাইসিয়ার অধিবাসীগণ মুসলিমদের আচরণে মুগ্ধ হয়। নাইসিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম উম্মার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৩৮ খৃষ্টাব্দে ওরখান সসৈন্যে নিকোমেডিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখানকার অধিবাসীগণ বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। ওরহানের শাসনকালে উসমানী সৈন্যগণ সর্বপ্রথম ইউরােপ ভূ-খন্ডে পা দেয়। ১৩৫৬ খৃষ্টাব্দে ওরখান গ্যালিপলি জয় করেন। স্থানীয় রাজা রাজকুমারী থিয়ােডােরাকে ওরখানের নিকট বিয়ে দেন।   সাদাসিধে জীবনঃ   তিনি নিজের নামে রৌপ্য মুদ্রা তৈরি করেছিলেন যা তুর্কি ভাষায় "আকি" নামে পরিচিত। তিনি দাতব্য কাজগুলির জন্য পরিচিত ছিলেন, দরিদ্রদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সম্পদ বিতরণ করেছিলেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে তাদের চিন্তাভাবনা এবং অভিযোগগুলি শোনার জন্য সময় দিতেন। আমীর উসমানের মতােই ওরখান সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন।রাজধানী বুরসাকে একটি আদর্শ মুসলিম শহরে পরিণত করেন। ব্রুসাতে তিনি একটি সুদৃশ্য মাসজিদ নির্মাণ করেন। পিতার মতােই তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। তিনি ছিলেন উঁচু মানের সুশাসক। পিতার মতাে তিনিও রণ-কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। উসমানের শাসনকালে কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিলাে না। যুদ্ধের সময় ঘােষণা দেওয়া হতাে। আগ্রহী লােকেরা এগিয়ে আসতাে। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হতাে। দূরদর্শী ওরহান একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বেতনভােগী নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। পদাতিক বাহিনীকে নাম দেওয়া হয় পিয়াদা এবং অশ্বারােহী বাহিনীকে বলা হতাে সিপাই। যুদ্ধবন্দী খৃষ্টান যুবকদের মধ্য থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে জাননিসার নামে একটি সৈন্য দলও তিনি গড়ে তােলেন।   ওরহানের মৃত্যুকালঃ-   ১৩৫৯ খৃষ্টাব্দে ওরহান ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তিনি ৩৩ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

জন্মস্থান ও পরিচিতিঃ-

উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় শাসক ওরহান গাজীর বাবা ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্টাতা প্রথম উসমান ও এবং মা ছিলেন ওমর বে'র কন্যা মালহুন হাতুন। তিনি ১২৮১ সালে সুগুতে  জন্মগ্রহণ করেন।

 আমীর উসমানের সুযােগ্য পুত্র ছিলেন ওরখান। ১৩২৬ খৃষ্টাব্দে তিনি বুরসার মসনদে বসেন। তিনি 'সুলতান উপাধি ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে, তার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা দর্শন করে উসমানই তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করে যান। 

ওরহান গাজীর স্ত্রী: নীলুফার হাতুন, অ্যাস্পোরকা হাতুন, থিওডোরা হাতুন, ইফ্টানডিস হাতুন।

 তাঁর পুত্র ছিলো: সুলায়মানপাশা, মুরাদ, ইব্রাহিম, হালিল, কাসিম। 

এবং তাঁর একটি মাত্র কন্যা সন্তান ছিলো যার নাম ফাতেমা হাতুন। 

গঠন ও চরিত্রঃ

 ওরহান গাজী কায়ী বংশের সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। 

তিনার লম্বা, স্বর্ণালম্বী দাড়ি এবং নীল চোখ ছিল। তিনি ছিলেন সৌম্য, ক্ষমাশীল, ধার্মিক ও ন্যায় বিচারক। তিনি ধর্মতত্ত্ববিদদের প্রশংসা করেছিলেন। তার দুই বাহুর পেশি শক্তি ছিলো দক্ষ, তরবারী চালনায় পারদর্শী ছিলেন এবং ধৈর্যশীল স্বভাবের ছিলেন। তিনি তাঁর বেশিরভাগ সময় কায়ী লোকদের সাথে সময় কাটাতেন, কিংবা তাদের সাথে দেখা করে সময় অতিবাহিত করতেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রশংসায় বিমুখ ছিলেন ।

বিবাহ বন্ধন ও দূর্গ জয়ঃ-

ওরহান গাজী ১৩২৬ সালে ওসমান গাজীর মৃত্যুর পরে কায়ী গোত্রের নেতা হন। তিনি ১৩৪৬ সালে বাইজেন্টাইন এগারোতম সম্রাট ইওনিস কনটাকুজিনাস  কন্যা তিউডোরার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

 তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়োহিসারের বাইজেন্টাইন প্রিন্সের মেয়ে হোলোফীরা ছিলেন। হোলোফিরা বিলেসিকের রাজপুত্রের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে ওরহান গাজীর হাত ধরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এরপর ওরহান গাজীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন এবং তাঁর নাম নীলুফার হাতুন হিসাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। তিনি মুরাদকে জন্ম দিয়েছিলেন, যিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের তৃতীয় সুলতান হিসেবে পরিচিত। তিনি বাইজেন্টাইন সম্রাট তৃতীয় অ্যান্ড্রোনিকাসকে পরাজিত করেছিলেন এবং নিকিয়া এবং ইজমিট সহ এশিয়া মাইনরের বিশাল অংশ জয় করেছিলেন। 

সুলতান উসমানের মতােই বীরযােদ্ধা ছিলেন ওরহান। ১৩২৭ খৃষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা তৃতীয় এন্ড্রোনিকাস এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ওরহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। পেলিকানন প্রান্তরে ওরহান তাঁর মুখােমুখি হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গ্রীস-রাজ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ওরখান স্বসৈন্য নাইসিয়া প্রবেশ করেন। নাইসিয়ার অধিবাসীগণ মুসলিমদের আচরণে মুগ্ধ হয়। নাইসিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম উম্মার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩৩৮ খৃষ্টাব্দে ওরখান সসৈন্যে নিকোমেডিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখানকার অধিবাসীগণ বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। ওরহানের শাসনকালে উসমানী সৈন্যগণ সর্বপ্রথম ইউরােপ ভূ-খন্ডে পা দেয়। ১৩৫৬ খৃষ্টাব্দে ওরখান গ্যালিপলি জয় করেন। স্থানীয় রাজা রাজকুমারী থিয়ােডােরাকে ওরখানের নিকট বিয়ে দেন। 

সাদাসিধে জীবনঃ

 তিনি নিজের নামে রৌপ্য মুদ্রা তৈরি করেছিলেন যা তুর্কি ভাষায় "আকি" নামে পরিচিত। তিনি দাতব্য কাজগুলির জন্য পরিচিত ছিলেন, দরিদ্রদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সম্পদ বিতরণ করেছিলেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে তাদের চিন্তাভাবনা এবং অভিযোগগুলি শোনার জন্য সময় দিতেন। আমীর উসমানের মতােই ওরখান সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন।রাজধানী বুরসাকে একটি আদর্শ মুসলিম শহরে পরিণত করেন। ব্রুসাতে তিনি একটি সুদৃশ্য মাসজিদ নির্মাণ করেন। পিতার মতােই তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন। তিনি ছিলেন উঁচু মানের সুশাসক। পিতার মতাে তিনিও রণ-কৌশলে পারদর্শী ছিলেন।

উসমানের শাসনকালে কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিলাে না। যুদ্ধের সময় ঘােষণা দেওয়া হতাে। আগ্রহী লােকেরা এগিয়ে আসতাে। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হতাে। দূরদর্শী ওরহান একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বেতনভােগী নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। পদাতিক বাহিনীকে নাম দেওয়া হয় পিয়াদা এবং অশ্বারােহী বাহিনীকে বলা হতাে সিপাই। যুদ্ধবন্দী খৃষ্টান যুবকদের মধ্য থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে জাননিসার নামে একটি সৈন্য দলও তিনি গড়ে তােলেন। 

ওরহানের মৃত্যুকালঃ- 

১৩৫৯ খৃষ্টাব্দে ওরহান ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তিনি ৩৩ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

 মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু 


আরো পড়ুন উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন নিয়ে বিশেষ ব্যাক্তিদের জীবনী । তাই লিঙ্কে ক্লিক করুন। 

বালা হাতুনের  স্বামী উসমানের জীবনী 

ওরহান গাজীর জীবনীঃ-

আর্তুগ্রুল গাজীর জীবনীঃ-  

উসমানের স্ত্রী বালা হাতুনের জীবনীঃ- 

সেলজুক সাম্রাজ্যের সুলতানদের নামের তালিকাঃ-

তুর্কির আর্তুগ্রুল সিরিজ সহ কয়েকটি ইসলামীক সিরিজ দেখার পর একজন শিক্ষার্থীরঅনুভূতিঃ-




Post a Comment

0 Comments