গাজী মিকাইল কোসেস |
মিকাইল কোসেস এর ইতিহাসঃ-
আনুমানিক ১৩৪০ সালের কথা তখন তুর্কিতে উসমান গাজীর সাম্রাজ্য প্রতিষ্টা হয়েছিল, কোস মিহাল নামে হারমানকায়ার গভর্নর ( টেকফুর) মিকাইল কোসেস যিনি ওসমান গাজীর সঙ্গে বিরোধীতা করলেও একটা সময় পর তিনি উসমান গাজীর সৈন্য হিসেবে ছিলেন। এবং উসমানকে যথেষ্ট সহযোগিতা ও সমর্থন করে গেছেন। উসমানীয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পিছনে কোস মিহালের অবদান কোনো অংশে কম নয়।
তাকে প্রথম উল্লেখযোগ্য "বাইজেন্টাইন রেনগেড" হিসেবে বিবেচনা করা হয় । উসমানীয়া সাম্রাজ্যে প্রবেশের পূর্বে মিকাইল কোসেসকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে বলা হয় । এবং ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কালেমা পড়ে সে মুসলমান হয়ে যায়। পুরাতন নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম "আবদুল্লাহ" দেওয়া হয় । কেননা তৎকালীন সময়ে , যারা অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় তাদের নাম "আবদুল্লাহ" রাখা হয়। তিনি একজন গাজী ছিলেন , অর্থাৎ গাজী মিহাল কিংবা আবদুল্লাহ মিহাল গাজী নামেও সুপরিচিত।
কোস মিহাল ছিলেন বাইজেন্টাইনের গভর্নর চিরমেনকিয়া অথবা হারমানকায়ার টেকফুর। হারমানকায়ার দুর্গটি তুরস্কের বিলেচিকের উলুদাই পর্বতমালার পাদদেশে ছিল। তিনি জাতিগত ভাবে গ্রিক ছিলেন। তার আসল নাম ছিলো মিকাইল কোসেস। মিকাইল শেষ পর্যন্ত লেফকে শহর, মেকেস শহর এবং আখিসার দূর্গের নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন। এবং তার নিয়ন্ত্রণে উক্ত শহর গুলো পরিচালিত হয়েছিলো।
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি উসমান গাজীর সঙ্গে কোনো না কোনো কারণে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করেছিলেন, তার সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে যথেষ্ট মিত্র ছিলেন। এবং সহনশীল মনোভাব নিয়ে উসমান গাজীর সঙ্গে বিভিন্ন কাজে মনোনিবেশ করতেন, এবং অধিকাংশ সময় তিনি উসমানের পরামর্শক হিসেবে ও কুটনৈতিক এজেন্ট হিসাবেও কাজ করেছিলেন।
মিকাইল কোসেসের ইসলাম ধর্ম গ্রহনের ব্যাপারটি ছিলো সব থেকে ভিন্ন। উসমান গাজীর সঙ্গে মিত্রতার কারণেই ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন সেই বিষয়ে ইতিহাস জোর দেয়। তিনি এক রাতে স্বপ্নে দেখেন, তাকে মুসলমান হওয়ার জন্য কেউ তাকে প্রত্যয়ী করেছিলেন, এবং কিছুদিন পর তিনি আনুমানিক ১৩০৪ থেকে ১৩১৩ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হন, এবং "আব্দুল্লাহ" নাম করণ করা হয়।
১৩২৬ সালে বুরসা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত তিনি উসমান গাজীর উত্তরাধিকারী প্রথম ছেলে উরহান গাজীর কূটনৈতিক উপদেষ্টা এবং দূত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মিকাইল কোসেস ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ খৃস্টান ধর্মত্যাগী যিনি উসমানীয়দের প্রজা হয়েছিলেন এবং তিনি উসমানীয়া সাম্রাজ্য তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কোস মিহাল এর বংশধর, যা মিহালুগলু(Mihaloğlu) নামে পরিচিত, বিশেষ করে ১৫ এবং ১৬ শতক পর্যন্ত যথেষ্ট নাম ছিলো। তাছাড়া, তারা ছিল রুমেলিয়ার উসমানীয়দের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সফল পরিবার।
বংশধরঃ-
মিকাইল কোসেস এর দুই পুত্র সন্তান ছিলো। "মেহমেদ ও তার ভাই যক্ষী বা বখশি, যারা উসমানীয় সামরিক যুদ্ধে দ্বিতীয় মুরাদের রাজত্বের প্রথম বছর গুলোতে যথেষ্ট অবদান রেখেছিলো। (যক্ষী বা বখশি, সুত্র গুলো অজানা)
মেহমেদের পুত্র হজর "বে" ছিলেন সুলতান (দ্বিতীয়) মেহমেদ এর অধীনে একজন বিশিষ্ট সামরিক কমান্ডার, যেমন তার দুই নাতি আলী বে এবং ইস্কেন্দার বে; তৃতীয় ভাই বালি বে কম পরিচিত, যদি তিনিও সম্মানিত গাজী অর্জন করেছিলেন। আরেকজন মেহমেদ, যিনি ১৬ শতকের গোড়ার দিকে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৫৪৩ সালে মারা যান, তাকে হজরের চতুর্থ পুত্র বা আলীর পুত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয় । একজন মিহালুগলু আহমেদ যিনি ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ছিলেন, তিনি সম্ভবত সর্বশেষ আকিনজিসের নেতা বংশানুক্রমিক ভাবে উত্তরাধিকারী পান এবং তারপরে পরিবারটি হ্রাস পেতে শুরু করে। তারা আধুনিক সময় পর্যন্ত বেঁচে ছিল, এবং এডির্নের আশেপাশে বুলগেরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে বিস্তৃত সম্পদ বজায় রেখেছিল এবং ১৭ শতকের ভ্রমণকারী ইভলিয়ার মতে, আমাস্যা এবং বার্সায় জমি ছিল।
গাজী মিকাইল কোসেসের মৃত্যুঃ-
১৩৪০ সালের কাছাকাছি সময়ে গাজী মিকাইল কোসেস এর মৃত্যু হয়। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, কোস মিহাল কে তারাবি, এডিরনে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। গাজী মিহাল বে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ "কমপ্লেক্স" তৈরি করেছেন, এডিরনের মধ্যে একটি ইমারত এবং হাম্মাম আছে ( হাম্মাম অর্থ গোসলখানা যাহা এক ধরনের বাষ্প স্নান বা ইসলামী বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত জনসাধারণের স্নানের স্থান) যা ১৪২২ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। কমপ্লেক্স সংলগ্ন কবরস্থানে এডিরনের পাশে গাজী মিকাইল কোসেস এর সমাধি রয়েছে।
ইংরেজী উইকিপিডিয়া এবং কিছু অনলাইনভিত্তিক ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেছি ।
আমার ফেসবুক আইডিটি ফলো করে সঙ্গে থাকুুন ।
আরো পড়ুন উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন নিয়ে বিশেষ ব্যাক্তিদের জীবনী । তাই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের বাণী ও উপদেশঃ-
2 Comments
ভালো থাকবেন
ReplyDeleteধন্যবাদ এতো সুন্দর একটি পোস্ট দেয়ার জন্য
ReplyDelete