এই গল্পটা এড়িয়ে গেলে পুরো জীবনের গল্পটাই মিস করবেন। ভালোবাসার গল্প। শেষ চিঠি!

গল্প : শেষ চিঠি 


লেখক: মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু

---

মেয়েটা  ভালোবাসতো একটা ছেলেকে,

মেয়েটা সবসময়ই ছেলেটাকে নিয়ে  জীবন

 সাথি করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিথর দেহে একাকী বিছানায় পড়ে থাকতো।

পরিবারের কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলে না , চুপচাপ থেকে অবুঝ মনে ছেলেটার কথা ভেবে  ভেবে অপেক্ষমান মুহুর্তগুলো কাটিয়ে নিতো। আসল কথাটা বলা হয় নি,  কয়েকদিন পূর্বে মেয়েটার জন্মদিনের পার্টিতে   কথা কাটাকাটি নিয়ে

ছেলেটার সাথে মনোমালিন্য  হয়েছিলো।

সেই থেকে তাদের কথাবার্তা যোগাযোগ সব ইতি।

এভাবে আর কয়দিন পরস্পরের সাথে কথাহীন ভাবে একা একা কাটাবে।

নিজেকে সামলাতে পারলেও মেয়েটি  নিজের মুক্তমনকে কখনো সামলাতে  পারে না।

মেয়েটি  ছেলেটার ভালোবাসায় ধরা দিয়ে মনের ভিতরে লুকানো যত কষ্ট  অভিমান মুছে ফেলে 

নিজে থেকেই ফোন করে ইকো পার্কে ছেলেটিকে আসতে বললো।

আসার আগমনের কথা শুনে আর ছেলেটার সাথে দেখা হবে ভেবে সেদিন রাত মেয়েটার ঘুম অপূর্ণ থেকে গেলো।

 সকাল হতে না হতেই  আনন্দের সাথে কেবল  সাজগোজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো ।

নয়টায় ঘর থেকে বের হলো, 

 পিন্ক কালারের ড্রেসে মেয়েটাকে খুবই অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। 

পার্কে  গিয়ে দেখতে পেলো  ছেলেটা

অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে, 

আর একহাত দিয়ে  মুখে লেগে থাকা ঘাম  টিস্যু দিয়ে মুছছে, মেয়েটা ভাবে, হতেই পারে   সে আমার  অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।

এসব ভাবতে ভাবতে মুচকি হেসে ছেলেটার  পাশে বসেই বলল ""এই তুমি কেমন আছো?

ছেলেটা বিমর্ষ মুখে কিছু না বলে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকলো।

""আমি এতো কষ্ট করে  পরিবারকে ফাকি দিয়ে  তোমার কাছে এসেছি

আর তুমি  নীরব দর্শক হয়ে বসে আছো।

ভালো খুব ভালো, এই রাজু কিছু বলো প্লীজ।

ছেলেটা তবুও কিছু বলে না ।

মেয়েটার সাজগোজ, আনন্দ, আর পরিবারকে ফাকি দিয়ে এখানে আশা কি সব ব্যার্থ হবে।

পরোক্ষণে মেয়েটা কেদেই ফেললো,

চোখের কোণে অশ্রু  জমে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলছে, 

তুমি কি সত্যি সত্যিই কথা বলবা না?

  ছোট ছোট কথা কাটাকাটি নিয়ে  ষোল দিন ধরে তুমি আমার সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে পারলে কেমন করে?

এতোদিনের সম্পর্ক  দুতিনটা কথার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নাকি?

তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবেসে ছিলে নাকি ভালোবাসার অভিনয় করে আমাকে ঠকিয়েছিলে?

সত্যি যদি ভালোবাসতে তাহলে একবার হলে একটা  ফোন  দিয়ে আমার খোজ নিতে 

 তুমি কি একবারো আমাদের ফেলে আসা কাটানো দিনের কথা  মনে করো না,

মনে করবেই বা কি করে?  

এখন মনে হচ্ছে তুমি কখনো আমাকে মন থেকে ভালোবাসো নি যদি সত্যিকারের  ভালোবাসতে তাহলে  এতো দিন কথা না বলে থাকতে পারতে না?

You cheat nd liar. 

বলে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।

যানবাহন ভর্তি রাস্তাতে  একাকী যাওয়ার সময় 

মেয়েটা এক্সিডেন্ট করা অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে।

তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে নেওয়া হয় ,

ডাক্তার সাহেব অনেক পরীক্ষা করার পর বললেন, 

প্রচন্ড মাথায় আঘাতের কারণে চিরদিনের জন্য চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে না।

একথা শুনার পর মেয়েটার  একমাত্র বড়ভাই

কাদতে কাদতে অচেতন অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন ঘন্টা খানেক পর জ্ঞান ফিরলে ডাক্তার সাহেব এসে সুসংবাদ দিলেন, 

নো টেনশন ব্রাদার, তোমার বোন দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবে।

একটা মধ্যবয়সী যুবক ছেলে , তোমার বোনকে নিজের চোখ খুলে দিয়েছে।

আমি তাকে না দেওয়ার জন্য বারণ করেছিলাম

আমাকে বলছে যে,  সে নাকী তোমার বোনের কাছের মানুষ। আমার প্রাণহীন দেহে চক্ষু থাকার চাইতে না থাকাটাই উত্তম।

তার চেয়ে এটা তাকে দাও,  এটা ওর জন্য বেশি প্রয়োজন। একথাগুলো বলার পর আমার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো যুবকটা


কিছু দিন যেতেই মেয়েটা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

মেয়েটি  এ ব্যাপারে ভাইয়ার মুখ থেকে সব কিছু জানলো।

মেয়েটার বুঝতে বাকী রইল না যে, চোখ দান কৃত হতভাগ্যটাই তার প্রিয়তম।

এবং কাঁদতে কাঁদতে চুল এলোমেলো অবস্থায় গলাকাটা মুরগীর মতো লাফালাফি করতেছে।

এমন সময় ডাক্তার সাহেব বললেন, একজন লোক তোমাকে চোখ দেওয়ার পূর্বে   চিঠি লিখে গেছে।

মেয়েটি তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে পড়তে শুরু করলো।

আমার হার্টবিট, 

আমার জান।

আমার কারনেই তোমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ছিলে ,

আজ আমার কারণেই তোমার দৃষ্টি শক্তি ফিরে  পেলে।

তুমি বলেছিলে না, আমি তোমাকে মিস করি না, 

এটা ভুল বলেছিলে তুমি , এমন কোনো দিন নেই এমন কোনো মুহূর্ত নেই যে তোমাকে মিস করছি না , চোখের পাতা যতবার নড়ে ততবার আমি তোমাকে মিস  করছি।

ও হে তুমি বলেছিলে না ,  তোমাকে

ভুলে  কথা বার্তা না বলে একা একা স্বার্থপরের মতো থেকেছি ।

রাইট বলেছো ""আমি   তোমাকে ভুলে একা কাটিয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার হৃদয়ের মধ্যে যে তোমার নাম লিখা সেটা মুছে ফেলা আমার

 পক্ষে সম্ভব না।

প্রতিনিয়তই রাতে  তোমার সাথে ফোনে কথা বলার জনা আমার মন উতলা হয়ে থাকতো।

বারবার মোবাইলে তাকিয়ে থাকি কখন তোমার একটা ফোন আসবে,  তোমার 

মধুর কন্ঠে "হ্যালো "  শব্দটি শুনার জন্য কতো রাত অপেক্ষা করেছি।

কখনো ভাবি আমি নিজে থেকে তোমাকে ফোন দেই, কিন্তু বিবেকের কাছে হেরে যেতে হয় মনের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কথায়।

সেদিন পার্কে তোমার সাথে কথা 

 বলিনি , কয়েক মিনিটের কথা বলাতে তোমার মনের মধ্যে নতুন করে জায়গা নিতে চাই না।

তোমাকে আমার জীবনে জড়িয়ে তোমার সুন্দর জীবনকে এলোমেলো করতে চাই না।

তোমাকে বলা হয় নি, ব্লাড ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধিতে তোমার কাছ থেকে আমাকে বারবার সরিয়ে দিতে চাচ্ছে, 

হয়তো আজই আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত।

আমি বলেছিলাম না তোমার মধ্যে সবসময়ই ছায়া হয়ে থাকবো  তোমাকে দেখবো, 

আমার দুটো চোখ তো সবসময়ই তোমার সাথে থাকবে।

কষ্ট যন্ত্রণা ছাড়া   তোমাকে কিছুই দিতে পারি নি,   আমার শেষ জীবনের দুটো চোখ তোমাকে উপহার দিলাম তুমি নতুন করে পৃথিবীটাকে দেখতে পাবে।

তুমি কেদো  না, আর আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন সাজাও ।

আমি নীরবে আকাশ থেকে তোমাকে দেখবো।

একটু কাশি আর নিতান্তই ঘুম পাচ্ছে তুমি কি আসবে ক্ষণিকের জন্য আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ি দিতে ।

দেহের অসহ্য  যন্ত্রণা বিভোর থাকা আচ্ছন্ন মনে তোমার প্রতীক্ষায় শেষ নিঃশ্বাসে হাতের স্পর্শ পেতে চাই।

অবশেষে তার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছেলেটার শেষ ইচ্ছে পূরণে সচেষ্ট হয়ে ক্যান্সারের মতো একটা ব্যাধিতে হার মেনে ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে মেয়েটাকে চিরদিনের মতো কাদিয়ে এ দুনিয়ার মায়া ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেলো।


প্রকাশকাল: 11/05/2016

Post a Comment

0 Comments