রেগে গেলে রাগ কন্ট্রোল কীভাবে করবেন | রাগ নিয়ন্ত্রণ করার টিপস |

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার টিপস 

ভূমিকাঃ- সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম গুনাবলী ও চমৎকার  বৈশিষ্ট্য দিয়ে । মানুষের সেইসব গুণাবলী ও বিচক্ষণ বিবেক বুদ্ধি দিয়েই সমাজের সঙ্গে দলবদ্ধ ভাবে জীবন যাপন করে।  মানুষের মায়া, ভালোবাসা যেমন আছে তেমনি ক্রোধ কিংবা রাগ আছে , রাগ থেকেই তো মনোমালিন্য কিংবা একে অপরের প্রতি ভেদাভেদ সৃষ্টি হয় কিংবা বিশালাকারের ঘৃণার পাহাড় জন্ম নেয়। ধীরে ধীরে দূরত্ব বেড়ে যায় এবং একে অপরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে পৃথক হয়ে যায় । রাগের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না , একদম পশুর ন্যায় আচরণ  করে কিংবা ধারালো কথার দ্বারা কিংবা হাতের দ্বারা প্রতিপক্ষ লোকটাকে আঘাত করে। এবং ক্ষতি সাধিত হয়।  কিছু মানুষ এমনই আছে যারা নিজেদের পরিবারের অর্থাৎ বাবা মায়ের সঙ্গেও রাগের বসতী পূর্ণ হয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলে, কিংবা হাতের কাছে যা থাকে তাই ভেঙ্গে ফেলে , একহাজার টাকার জন্য অনেক সময় লক্ষ টাকার ক্ষতি করে ফেলে। রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।  ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে জয়ের আবাস মিলে।  আঞ্চলিক ভাবে একটা কথা বলা হয়েছে, "রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন"! রাগী ব্যাক্তি পরিবার, সমাজ ও বন্ধুবান্ধবের কাছেও ঘৃণিত, কেউ চলাচলেও আগ্রহ প্রদর্শন করে না। এদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেও কেউ মিশে না। হুট করে বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা নিতান্তই কমে আসে।  কঠিন মুহূর্তে যে রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না, সে জীবনে উন্নতি সাধন করতে পারে না। রাগী মানুষের মন অতিষ্ঠ থাকে, যখন তখন রাগ করে বসে। এবং সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বসে। 

  আজকে আমি আলোচনা করবো   

মানুষ যেসব কারণে রেগে যায়ঃ-

হাজারো কারণে মানুষ রেগে যেতে পারে, রেগে যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ থাকে না। বুদ্ধিমানরাও কখনো কখনো রেগে যায়। যে কোনো বয়সী ছেলে মেয়েরা রেগে গিয়ে আগুন হয়ে যায়। মাঝে মাঝে দেখি, মিচকা শয়তানদের কম্বলে লাত্থি মারলেও খিল খিল করে হাসে। বিভিন্ন কারণে মানুষ রেগে যায় তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলো তুলে ধরা হলোঃ-

আপনাকে কেউ কথার মাধ্যমে আঘাত দিচ্ছে, বরাবরের মতোই আপনার উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে ।

অন্যায় ভাবে আপনাকে হেয়প্রতিপন্ন করছে । আপনার সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথা বলছে এবং জনসম্মূখে অপমান করছে । এবং নেককার জনক ঘটনার দোষী সাব্যস্ত করছে যদিও উক্ত দোষ আপনার উপর অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে । আপনি উত্তেজিত না হয়ে বরং ঠান্ঠা মাথায় প্রতিবাদ করার ভাষা খুজে বের করুন।

আপনাকে প্রত্যক্ষ ভাবে কেউ হত্যার হুমকী, গারাগালিসহ অসহনীয় আচরণ করছে। আরও অনেক কারণেই আপনি রেগে যেতে পারেন , যেসব কারণে আপনি রেগে যাচ্ছেন সেইসব কারণ গুলো আপনি চিহ্নিত করুন। এবং উত্তেজিত না হয়ে শান্তশিষ্ট মনে আপনি সমাধান করুন। ইন শা আল্লাহ খুব সহজেই আপনি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

রাগের সময় আপনার কেমন অনুভুতি হয়ঃ- 

রাগ মানুষের চরম শত্রু। রাগ মানুষের জীবন থেকে অনেক মূল্যবান কিছু কেড়ে নেয়, রাগের সময় মানুষ জান মালের ক্ষতি করে বসে, হাতের দ্বারা, মুখের দ্বারা , শক্তির দ্বারা একে অন্যের বিনষ্ট করে ফেলে। আবার অনেক সময় মূল্যবান জিনিস ভাঙ্গতেও দ্বিধাবোধ করে না এবং এতে করে মানুষ বিষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাগের সময় যেমন অনুভতি হয়! মনে করুন, আপনি কারো সাথে তর্ক বিতর্ক করলেন, তর্ক বিতর্ক করার এক পর্যায়ে আপনার অনেক রাগ চলে আসলো, আপনি নিজেকে কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না, তখন অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধ নিয়ে আপনি ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে পড়লেন, তখন আপনার অনুভতিটা চরম পর্যায়ে চলে যাবে , হয় কথার মাধ্যমে আঘাত করবেন নতুবা হাতের মাধ্যেমে আঘাত করবেন। সুতরাং রাগের সময় অনুভুতিটা ভয়াবহ থাকে , সেই সময় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন, এবং বিষয়টি শান্ত ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করবেন। 

রেগে গেলে যেভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন! 

স্বাভাবিক মানুষ গুলোও হঠাৎ করে রেগে যায়, কেউ কন্ট্রোল করতে পারে , কেউ পারে না। যারা রাগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে তারা জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। এবং তাদের মধ্যে নূন্যতম জ্ঞান থাকে না। তাই আপনাকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু উপায় বলে দিচ্ছি। মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

মনে করুন, আপনাকে কেউ রাগিয়ে তুলছে, কিংবা কথার দ্বারা আপনাকে বিষণ আঘাত দিচ্ছে , সে বন্ধু হোক কিংবা প্রিয়জন । কেউ আপনার উপস্থিতে আপানকে মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে, তখন আপনি কেনো , কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে রাগ কন্ট্রোল করা অসম্ভব। তবুও আপনাকে রাগ কন্ট্রোল করতে হবে। 

  • প্রথমতঃ- "নিরবতাকে" বেছে নিতে হবে । অর্থাৎ আপনি নিশ্চুপ থাকবেন এবং মনে মনে প্রতিবাদ করবেন। 
  • দ্বিতীয়তঃ- "মাঠির" দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনার সব রাগ মাঠির সঙ্গে মিশে ফেলতে হবে।
  • তৃতীয়তঃ- আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উক্ত জায়গা থেকে স্থানচ্যুত করতে হবে। আপনি যদি উক্ত জায়গা থেকে সরে আসেন তাহলে কিছু সময় পর আপনার রাগও কমে আসবে, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে সবচাইতে বড়ো ভূমিকা হচ্ছে জায়গা পরিবর্তন করা।
  • চতুর্থতঃ- সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হওয়া। অর্থাৎ আপনি উক্ত জায়গা থেকে সরে আসার পর আপনার বন্ধুর শরণাপন্ন হবেন, যার সঙ্গে হাসি খুশি করে সময় অতিবাহিত করেন। আপনি যদি এমন বন্ধুর সঙ্গে থাকেন তাহলে ক্রোধান্বিত চেহারাও লাবণ্যময় হয়ে যাবে 
সুতরাং রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আপনাকে এসব উপায় অবলম্বন করতে হবে ! 

রেগে যাওয়ার পর মানুষের প্রতিক্রিয়া কেমন হয় ! 

এতো সময় আমরা পড়েছি, মানুষ কি সব কারণে রেগে যায় ! রাগের সময় অনুভুতি কেমন হয় ! রেগে গেলে রাগ কন্ট্রোল করবেন কীভাবে! রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কী কী উপায় অবলম্বন করতে হবে ! 

রেগে যাওয়ার পর মানুষের প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়ে যায়, আমি ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি । মনে করুন, আপনার বাবার কাছে এক হাজার টাকা চাইলেন, তিনি আপনাকে টাকা দিতে চান নি , এতে করে আপনি বাবার প্রতি ক্ষুব্ধ হলেন, এবং তৎক্ষণাৎ ঘরের আসবাব পত্র যেমন ফ্রিজ, টিবি, কম্পিউটার, কিংবা যেকোনো মূল্যবান জিনিস ভেঙ্গে ফেললেন। কারণ রাগের সময় আপনি বুঝতে পারছিলেন না কী করছেন, কারণ তখন হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পায়, মাথায় ভাঙ্গার কথা নাড়া দিছিলো বলেই আপনি জিনিস পত্র ভেঙ্গে দিলেন। কিছু টাকার জন্য আপনি হাজার টাকার ক্ষতি করে বসলেন , ঘন্টা খানেক পর আপনার রাগ তখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে ঠিক তখনই বুঝতে পারবেন আপনার কাজটি করা ঠিক উচিত ছিল নাকী ছিলো না। অবশ্যই অনুচিত ছিলো, তখন নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত হবেন । তাই আমার কথা গুলো আপনি বোধগম্য করতে পারছেন, রাগের সময় উত্তেজিত না হয়ে বরং ধৈর্য্য ধরুন। শান্তশিষ্ট ও নিরব নিভৃত থাকুন। কথা দিলাম, এতে করে আপনি হেরে যাবেন না বরং জয়লাভ করবেন । 

রাগ থেকে বাঁচার উপায় ও করণীয়ঃ- 

নিঃসঙ্গহীনতা ও একাকীত্বের ফলে মানব মস্তিষ্কে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেইজন্য আপনাকে ভালো সঙ্গী গ্রহণ করতে হবে । যার সঙ্গে কথা বললে আপনার মন উৎফুল্ল ও আনন্দিত থাকে।

আপনার শরীর অসুস্থ থাকলে আপনার মন মানসিকতা ও মেজাজ চরমভাবে কিটকিটে থাকবে, যে কারো উপদেশ মূলক কথা গুলো আপনার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়াবে, তাই সর্ব প্রথম আপনার শরীরের যত্ন নিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম নিতে হবে , প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে। ভোরের মৃদু বাতাস আপনাকে প্রশান্তি দান করবে। আপনার খাওয়া দাওয়ার প্রতিও যত্নশীল হতে হবে, সবসময়ই মনকে আনন্দ উৎফুল্ল রাখতে হবে । একাকীত্ব ও সঙ্গবিহীন যেকোনো মানুষকে নিরাশার চাদরে ডুবিয়ে দেয়, এবং মানুষের ব্রেইনের কার্যক্রমটা ব্যাহত হওয়ার ধরুন মেজাজটা সবসময়ই খিটখিটে থাকে, আর এই সময় কেউ যদি আপনার সঙ্গে মজার ছলে দুষ্টুমী করে তাহলে সে নিশ্চিত আপনার ক্রোধের স্বীকার হবে , নয়তো ঘৃণার পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। রাগ থেকে বাঁচার উপায় নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না, আপনাকে উপরোক্ত ধারণা গুলো পেশ করেছি , আপনার মৌণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে উহার যথাযথ ব্যবহার করুন। 

"রাগ নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে"

লেখাঃ-  মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু

 Page:- Hamidul Islam Raju

Post a Comment

0 Comments