কবিতা:  নর্দমার সেই ছোট্ট ছেলে। কবি মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু 

 কবিতা   নর্দমার সেই ছোট্ট ছেলে

কবি  মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু


একদা পড়ন্ত বেলা শান্ত শিষ্ট আপন মনে
দারিদ্র্য পিড়িত বস্তিতে কনকনে শীতে যাত্রা,
চোখের এক দর্শনে বুকের ভেতর বেজে উঠল কষ্টের ঘন্টা,
জীর্ণ শীর্ণ বস্ত্রে উষ্ক শুষ্ক চেহারায় মেঠো পথে 
লম্বা চওড়া হয়ে পড়ে থাকা নর্দমার সেই ছোট্ট
ছেলেটাকে এক দর্শনে দেখলেই নষ্ট হয়ে গেলো মনটা।
ধীরগতিতে সম্মুখে আসিয়া রুক্ষ চুলে হাত
 বুলিয়া  কহিলাম, কী হয়েছে? বাপু
ক'দিন হতে খাইতে পায় নি সাব, ছাপাস্বরে কহিল সে।
সঙ্গে সঙ্গে দয়ার উদ্রেক জাগিল, লইয়া গেলাম সোনালী কীচেনে।
পেটভরে খাওয়াইলাম তারে, কতো কথা কহিলাম তারে
আমার মুখ পানে চেয়ে থেকে হাসিল মন ভরে।
 অবশেষে ক্ষুদার্থ মুখে চমকালো হাসি, 
হঠাৎ উঠলো তাহার ক্ষীণ কষ্টের কাশি,
কহিলাম আমি,  "এই নেও পানি"। 
অনায়াসে পানি খেয়ে কহিল সে, " খুব ভালো আপনি"
জানালা দিয়ে বসন্তের বায়ুর ধাক্কায় নড়চড় করে উঠলো তাহার রুক্ষ শুষ্ক এলো চুল,
এমন অবস্থা দেখে চতুর্দিকে সুঘ্রাণ নিয়া আসিল প্রাকৃতিক রঙের ফুল।
মনে মনে ভাবিলাম আমি , "মহৎ কাজ করিয়াছি, করিনি কোনো ভুল"।
"নাম কি তোমার"? কহিল সে, "বদরুল"
নামের তারিফ করিয়া কহিলাম, "কে কে আছে বাড়িতে"?
 ছোট্ট একটা বোন আছে , করে মাইনষের বাড়ি কাম,
বইবিহীন শিশু ওয়ানে পড়ে, পারুল হলো তার নাম। 
ঝকঝকে নোট তাহার হাতে দিয়ে মায়ার স্বরে কহিলাম,
 শুনো বদরুল, "পাচশত টাকা দিয়ে বই কিনে দিও, স্কুলে  করবে সে ভালো রুল"।
দুর থেকে আমাদের মহৎ কর্মকান্ড দেখে নিলো পারুল।
কৃতজ্ঞতার সুরে ঠোঁটের পাপড়ি দুলিয়া কহিল পারুল, 
""আল্লা আফনাকে অনেক বড়  করুক""
""এখন আমরা যাই""
মাথা নাড়িয়া সম্মতি দিলাম, তবুও দিতে পারিনি  বিদায়।
নিভৃত হইয়া চাহিয়া থাকিলাম তাহাদের গমনের রাস্তায়।
মনে পড়ে গেল আমার লেখা দুটি কবিতার অংশবিশেষ।
""এতিম বিকলাঙ্গদের কষ্টে কাদে যাহার চোখ,
সার্থক মানুষ তিনি, ভুলে না লোকে তাহার মুখ""।
-
-- প্রকাশকাল  19-02-17 ইং

Post a Comment

0 Comments