ভূমিকা: "সাহস" একটি অনুপ্রেরণামূলক বাংলা কবিতা, যেখানে ভয় ও সন্দেহকে জয় করে জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। কবিতায় জ্ঞান, সাহস ও অবিচল চেষ্টা দিয়ে অন্ধকার ভেদ করে আলো খোঁজার আহ্বান রয়েছে। এতে মানবতার মর্মবাণী, অসহায় ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মহত্ত্ব এবং ভালোবাসা, দয়া ও করুণার মাধ্যমে সুখী ও অর্থবহ জীবন গড়ার শিক্ষা ফুটে উঠেছে।
![]() |
| কবিতা নিচে দেওয়া হলো:- |
সাহস
— মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু
ভয়কে হতে দিও না পথের প্রহরী
ভয়ে মুছে যায় স্বপ্নের গড়ি।
সন্দেহের কালো মেঘ ঢুকতে দিও না মনে,
তাতে সূর্যের আলো হারায় জীবনের ক্ষণে।
জ্ঞান, সাহস, চেষ্টা রাখো সাথে,
অন্ধকারে আলো পাবে এ প্রাতে।
হোঁচট খেলে থেমো না কোনোদিন,
ব্যর্থতা শেখায়, জিততে হবে প্রতিদিন।
সুখের খোঁজে পথে যদি দুঃখ আসে,
পিছিয়ে যেও না, দৃঢ় থেকো পাশে।
অন্যের কষ্টে হাত বাড়াও খোলা,
তাতেই লুকিয়ে সুখের দোলা।
অসহায়, এতিম, বিকলাঙ্গ যত,
তাদের পাশে দাঁড়ানোই সত্য মহত্ত্ব।
যে দুঃখে মুখ ফিরিয়ে নেয় না কখনো,
মানবতার আলোয় সে জ্বলে অনন্ত কালো।
ক্ষণস্থায়ী জীবন, সময় যে স্বল্প,
তাতে রেখে যাও স্নেহের সংলাপ।
মৃত্যুর পরও নাম যেন থাকে,
মানুষের হৃদয়ে আলো হয়ে ডাকে।
ভালোবাসা, দয়া, করুণা দিয়ে,
জীবন সাজাও সোনালি নীড়ে।
যাতে বিদায়ের পরও থাকে স্মৃতি,
শিক্ষণীয় জীবন – সবার প্রীতি।
সারমর্ম
এই কবিতাটি ভয়, সন্দেহ ও ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে জীবনের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার এক অনুপ্রেরণামূলক বার্তা বহন করে। এতে মানবতার প্রতি আহ্বান, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মহত্ত্ব, এবং ভালোবাসা, দয়া ও করুণার মাধ্যমে সুখী ও অর্থবহ জীবন গড়ার শিক্ষা রয়েছে। কবি দেখিয়েছেন, প্রকৃত সাফল্য নিজের জন্য নয়, বরং অন্যের জীবনে আলো হয়ে ওঠায়।
লাইন-ভিত্তিক সাহিত্যিক বিশ্লেষণ
১. ভয়কে হতে দিও না পথের প্রহরী → এখানে “ভয়”কে একজন “প্রহরী” বা রক্ষকের রূপক (metaphor) দেওয়া হয়েছে। এই প্রহরী মানুষের অগ্রগতির দ্বার আটকে রাখে, যেন সে নিজের স্বপ্নপথে পা রাখতে না পারে। কবি পাঠককে আহ্বান করছেন—ভয় যেন তোমার যাত্রাপথের নিয়ন্ত্রক না হয়।
২. ভয়ে মুছে যায় স্বপ্নের গড়ি। → “স্বপ্নের গড়ি” বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের আশা, পরিকল্পনা, ও ভবিষ্যতের স্বপ্নরাজি। ভয় সেই গড়নকে মুছে দেয়, ধ্বংস করে। এই লাইনে চিত্রকল্প আছে—যেন আঁকা ছবি ভিজে গিয়ে মুছে যাচ্ছে।
৩. সন্দেহের কালো মেঘ ঢুকতে দিও না মনে, → সন্দেহকে তুলনা করা হয়েছে কালো মেঘের সঙ্গে। কালো মেঘ আকাশ ঢেকে দিলে যেমন আলো আসে না, তেমনই মনে সন্দেহ ঢুকলে জীবনের ইতিবাচক দিগন্ত ঢাকা পড়ে যায়।
৪. তাতে সূর্যের আলো হারায় জীবনের ক্ষণে। → সূর্যের আলো এখানে প্রতীক আশা, সাহস, ও জ্ঞানের। সন্দেহের কারণে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত অন্ধকারে ঢেকে যায়—এই ভাবটি তুলে ধরা হয়েছে।
৫. জ্ঞান, সাহস, চেষ্টা রাখো সাথে, → জীবনের তিনটি প্রধান চালিকা শক্তি—জ্ঞান, সাহস ও চেষ্টা—মিলে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব।
২. ভয়ে মুছে যায় স্বপ্নের গড়ি। → “স্বপ্নের গড়ি” বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের আশা, পরিকল্পনা, ও ভবিষ্যতের স্বপ্নরাজি। ভয় সেই গড়নকে মুছে দেয়, ধ্বংস করে। এই লাইনে চিত্রকল্প আছে—যেন আঁকা ছবি ভিজে গিয়ে মুছে যাচ্ছে।
৩. সন্দেহের কালো মেঘ ঢুকতে দিও না মনে, → সন্দেহকে তুলনা করা হয়েছে কালো মেঘের সঙ্গে। কালো মেঘ আকাশ ঢেকে দিলে যেমন আলো আসে না, তেমনই মনে সন্দেহ ঢুকলে জীবনের ইতিবাচক দিগন্ত ঢাকা পড়ে যায়।
৪. তাতে সূর্যের আলো হারায় জীবনের ক্ষণে। → সূর্যের আলো এখানে প্রতীক আশা, সাহস, ও জ্ঞানের। সন্দেহের কারণে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত অন্ধকারে ঢেকে যায়—এই ভাবটি তুলে ধরা হয়েছে।
৫. জ্ঞান, সাহস, চেষ্টা রাখো সাথে, → জীবনের তিনটি প্রধান চালিকা শক্তি—জ্ঞান, সাহস ও চেষ্টা—মিলে জীবনযুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব।
৬. অন্ধকারে আলো পাবে এ প্রাতে। → “অন্ধকার” মানে সংকট, দুঃখ, বা অনিশ্চয়তা। “আলো” মানে সমাধান, সাফল্য, বা মুক্তি। আর “প্রাতে” শব্দটি নতুন সূচনার প্রতীক—যেন রাতের পর ভোর আসে।
৭. হোঁচট খেলে থেমো না কোনোদিন, → জীবনে ব্যর্থতা বা ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কবি বলছেন, হোঁচট খেলেও থেমে যাওয়া চলবে না, বরং পথ চলা চালিয়ে যেতে হবে।
৮. ব্যর্থতা শেখায়, জিততে হবে প্রতিদিন। → ব্যর্থতাকে এখানে শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে জয়লাভের মনোভাবই জীবনের আসল সাফল্যের চাবিকাঠি।
৯. সুখের খোঁজে পথে যদি দুঃখ আসে, → জীবনের পথচলায় সুখ-দুঃখ অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। সুখের সন্ধান করতে গিয়ে দুঃখ আসা অনিবার্য।
১০. পিছিয়ে যেও না, দৃঢ় থেকো পাশে। → দুঃখ এলে পিছু হটলে স্বপ্নপথ থেমে যাবে। বরং দৃঢ় মনোবল নিয়ে তা মোকাবিলা করার উপদেশ দিয়েছেন কবি।
১১. অন্যের কষ্টে হাত বাড়াও খোলা,→ সহমর্মিতা ও মানবিকতার আহ্বান—যখন অন্য কেউ কষ্টে থাকবে, তখন দ্বিধাহীনভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
১২. তাতেই লুকিয়ে সুখের দোলা। → প্রকৃত সুখ নিজের জন্য কিছু পাওয়ায় নয়, বরং অন্যের কষ্ট লাঘব করে তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলায়।
১৩. অসহায়, এতিম, বিকলাঙ্গ যত, → সমাজের দুর্বল, অবহেলিত, বা প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
১৪. তাদের পাশে দাঁড়ানোই সত্য মহত্ত্ব।→ মহত্ত্বের মাপকাঠি এখানে নির্ধারিত হয়েছে মানবিক সহায়তার ভিত্তিতে—যিনি দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনিই সত্য মহৎ।
১৫. যে দুঃখে মুখ ফিরিয়ে নেয় না কখনো, → মানবতার প্রকৃত রূপ—দুঃখের মুহূর্তে পাশে থাকা।
১৬. মানবতার আলোয় সে জ্বলে অনন্ত কালো। → এমন মানুষ মৃত্যুর পরও মানবতার আলো হয়ে চিরকাল স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন। “আলো” এখানে প্রতীক সম্মান, শ্রদ্ধা ও চিরন্তন স্মৃতির।
১৭. ক্ষণস্থায়ী জীবন, সময় যে স্বল্প, → জীবনের স্বল্পতা ও সময়ের দ্রুতগতি এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
১৮. তাতে রেখে যাও স্নেহের সংলাপ। → জীবনের শেষ প্রাপ্তি হবে এমন কথা, আচরণ ও ভালোবাসা, যা অন্যের মনে চিরস্থায়ী ছাপ ফেলবে।
১৯. মৃত্যুর পরও নাম যেন থাকে, → মানুষ চলে যায়, কিন্তু নাম (খ্যাতি/স্মৃতি) রয়ে যায় কাজের মাধ্যমে।
২০. মানুষের হৃদয়ে আলো হয়ে ডাকে।
→ মৃত্যুর পরও এমন জীবন যাপন করতে হবে, যাতে মানুষ আপনার স্মৃতিকে আলোকবর্তিকার মতো আহ্বান জানায়।
২১. ভালোবাসা, দয়া, করুণা দিয়ে, → মানবিক তিনটি প্রধান গুণ—ভালোবাসা, দয়া, ও করুণা—এখানে জীবনের অলংকার হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
২২. জীবন সাজাও সোনালি নীড়ে। → “সোনালি নীড়” একটি সুন্দর, সুখময় ও নিরাপদ জীবনের রূপক, যা গড়ে তুলতে হবে মানবিকতার ভিত্তিতে।
২৩. যাতে বিদায়ের পরও থাকে স্মৃতি, → মৃত্যুর পরও মানুষের মনে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা এখানে প্রকাশ পেয়েছে।
২৪. শিক্ষণীয় জীবন – সবার প্রীতি। → এমন জীবনযাপন করতে হবে যা অন্যদের জন্য শিক্ষণীয় ও প্রিয় হয়ে থাকবে—এটাই কবিতার সারকথা।
শেষ কথা: জীবনে ভয়, সন্দেহ ও ব্যর্থতা থাকবেই, কিন্তু তা যেন কখনো আমাদের পথ রুদ্ধ না করে। মানবতার আলোয়, ভালোবাসা, দয়া ও করুণার স্পর্শে জীবন সাজালে মৃত্যুর পরও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব। এটাই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
📖 পরবর্তী পোস্ট পড়ুন
- 🌿 কবিতাঃ সম্মুখে অগ্রসর
- 💖 কবিতা: নর্দমার সেই ছোট্ট ছেলে
- 🌸 নিজেরে বিষণ একা মনে হয়-
- 🕊️ মন যেখানে শান্তি পায়
✍️ মৌলিকতার ঘোষণা
"সাহস" কবিতাটি সম্পূর্ণরূপে আমার নিজের সৃষ্টি। এর প্রতিটি লাইন, ভাবনা ও উপমা আমি নিজেই রচনা করেছি। কোনো পরিচিত সাহিত্যকর্ম, কবি বা প্রকাশিত লেখার সাথে এর কোনো মিল পাওয়া যায়নি। অনুমতি ছাড়া এই কবিতার পূর্ণ বা আংশিক অংশ নকল, পুনঃপ্রকাশ বা ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।
© 12 আগস্ট 2025 Hamidul Islam Raju |
আমার ওয়েবসাইট
অনুমতি ছাড়া এই লেখার কোনো অংশ কপি বা ব্যবহার করা যাবে না।
অনুমতি ছাড়া এই লেখার কোনো অংশ কপি বা ব্যবহার করা যাবে না।



0 Comments