"চিরন্তন অপেক্ষা | হৃদয়স্পর্শী প্রেম ও বেদনার কবিতা – মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু"

 

"চিরন্তন অপেক্ষা" মো হামিদুল ইসলাম রাজু

চিরন্তন অপেক্ষা

কবি: মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু
তুমি চলে গেলে এক বিকেলের রোদ ডুবে যাওয়া ক্ষণে,
আকাশ যেন তখনই শিখে নিল কেমন করে কাঁদতে হয়।
হাওয়া থেমে গিয়েছিল,
শিশিরের মতো ঝরে পড়ছিলো অপ্রকাশিত সব কথা—
যা আমি বলতে পারিনি,
যা তুমি শুনতে চেয়েছিলে হয়তো শেষবার।

আমি বসে আছি সেই জানালার ধারে,
যেখানে একসময় তোমার হাতে আমার হাতের উপর পড়ত,
তোমার হাসি ছুঁয়ে যেতো আমার নিঃশ্বাস।
এখন শুধু পর্দার ফাঁক দিয়ে ঢুকে আসে বিষণ্ন বাতাস,
যেন তাতে তোমার বিদায়ের গন্ধ লেগে আছে।

তুমি জানো?
রাতগুলো এখন আর নিছক রাত নয়—
এগুলো একেকটা দীর্ঘ যন্ত্রণার নদী,
যার স্রোতে আমি ভেসে চলেছি,
গন্তব্যহীন কোনো চাঁদের দিকে।

আমার চায়ের কাপে আজও জমে ওঠে
তোমার ঠোঁটের স্মৃতি—
প্রথম চুমুকে মনে পড়ে যায়,
তুমি বলেছিলে, “আমার সাথে থাকলে শীতও গ্রীষ্ম হয়ে যায়।”
কিন্তু এখন শীত এত গভীর,
যেন তোমার অনুপস্থিতি তার প্রতিটি হিমকণায়
আমাকে শাস্তি দিচ্ছে।

তুমি যখন চলে গেলে,
শুধু একজন মানুষ হারিয়ে যায়নি—
আমি হারিয়েছি আমার ভিতরের সমস্ত রঙ,
হারিয়েছি সকালবেলার আলোয় জেগে ওঠার আনন্দ,
হারিয়েছি নিজের প্রতিচ্ছবি থেকে হাসি।

তবু আমি অপেক্ষা করি,
কারণ অপেক্ষার মধ্যেই তোমাকে সবচেয়ে কাছে মনে হয়।
স্বপ্নে যখন তুমি এসে দাঁড়াও,
আমি সেই মুহূর্তগুলোকে আঁকড়ে ধরি,
যেন ভোর হোক বা না হোক, তোমাকে ছাড়বো না আর।

যদি কোনো একদিন তুমি ফিরে আসো—
আমি তোমার জন্য সাজিয়ে রাখবো
আমার সমস্ত সঞ্চিত আলো,
অশ্রুর ভেতর লুকিয়ে রাখা সেই হাসি,
যা কেবল তোমার জন্যই জন্মেছিল।

তুমি আসবে কি?
আমার দরজার সামনে বসে আছে এক অনন্ত প্রশ্ন,
যা প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে আমাকে জাগিয়ে তোলে,
আশার আলো আর ভয় একসঙ্গে বুকে জ্বালিয়ে রাখে।

আমার ভালোবাসা তোমাকে খুঁজে বেড়াবে
জীবনের শেষ প্রহর পর্যন্ত—
কারণ তুমি শুধু একজন নও,
তুমি আমার সমস্ত কবিতার প্রথম আর শেষ পংক্তি।

📜 সারমর্ম – "চিরন্তন অপেক্ষা"

“চিরন্তন অপেক্ষা” কবিতাটি এক অন্তহীন বিরহ ও অদম্য প্রেমের কাহিনি, যেখানে প্রিয়জনের অনুপস্থিতি জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে বিষণ্নতার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। প্রিয়জন বিদায় নিয়েছেন এক সোনালি বিকেলের শেষে, আর সেই বিদায়ের সঙ্গে যেন থেমে গেছে আকাশের রঙ, বাতাসের গতি, এমনকি কবির নিজের হৃদস্পন্দনও।

কবি জানালার ধারে বসে থাকেন—সেই একই জানালা, যেখানে একসময় প্রিয়জনের হাত তাঁর হাতে মিলত, হাসি ছুঁয়ে যেত নিঃশ্বাসে। এখন সেই জানালায় কেবল আসে শূন্যতার হাওয়া, যা বিদায়ের গন্ধে ভরা। শীতের এক কাপ চা পর্যন্ত প্রিয়জনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে—যেখানে প্রথম চুমুকেই ভেসে ওঠে হারানো ভালোবাসার উষ্ণতা।

রাত্রিগুলো এখানে কেবল অন্ধকার নয়; তারা যেন দীর্ঘ এক যন্ত্রণার নদী, যার প্রতিটি ঢেউ অতীতের স্মৃতি বয়ে আনে, আর কবিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অজানা কোনো চাঁদের দিকে। এই নদীতে ভেসে চলতে চলতে কবি উপলব্ধি করেন—প্রিয়জন হারানো মানে শুধু একজন মানুষকে হারানো নয়, বরং হারানো মানে নিজের ভিতরের সমস্ত রঙ, জীবনের ভোরবেলার হাসি, আর প্রতিচ্ছবিতে দেখা আনন্দ।

তবুও কবি হাল ছাড়েন না—কারণ অপেক্ষা তাঁর কাছে ভালোবাসার সবচেয়ে জীবন্ত রূপ। স্বপ্নে প্রিয়জন ফিরে এলে তিনি সেই মুহূর্তকে আঁকড়ে ধরেন, ভোর হোক বা না হোক, যেন আর কখনো হারাতে না হয়। এই প্রত্যাশার ভেতরেই লুকিয়ে আছে তাঁর বেঁচে থাকার কারণ, তাঁর সমস্ত কবিতার প্রথম ও শেষ পংক্তি।

কবিতাটি শেষ হয় এক অনন্ত প্রশ্নে—প্রিয়জন কি ফিরবে? এই প্রশ্ন প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে কবিকে জাগিয়ে তোলে, আশার আলো ও আশঙ্কার শীতল শ্বাস একসাথে বুকে জ্বালিয়ে রাখে। যতদিন শ্বাস আছে, ততদিন তাঁর ভালোবাসা সেই প্রিয়জনকে খুঁজে ফিরবে, কারণ সেই মানুষ কেবল প্রেম নয়—তিনি কবির সমস্ত সৃষ্টির প্রাণ, চিরন্তন অপেক্ষার অবিনশ্বর প্রতীক।

✒ শেষ কথা

ভালোবাসা শুধু একসাথে থাকার আনন্দ নয়—এটি অপেক্ষার ধৈর্য, হারানোর বেদনা এবং স্বপ্নে ফিরে পাওয়ার স্নিগ্ধ প্রতীক্ষা। চিরন্তন অপেক্ষা সেই ভালোবাসার এক অবিনাশী প্রতিচ্ছবি, যা সময়ের হিসাব মানে না, দূরত্বে মুছে যায় না, বরং প্রিয়জনের স্মৃতিতে প্রতিটি মুহূর্তে বেঁচে থাকে।

হয়তো ফিরে আসা হবে, হয়তো হবে না—কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা তার আপন মানুষটিকে হৃদয়ের গভীরে সারাজীবন ধরে রাখে, অশ্রুর কুয়াশায়, স্মৃতির কোমল আলোছায়ায়।

📖 পরবর্তী পোস্ট পড়ুন

✍️ মৌলিকতার ঘোষণা

"চিরন্তন অপেক্ষা" কবিতাটি সম্পূর্ণরূপে আমার নিজের সৃষ্টি। এর প্রতিটি লাইন, ভাবনা ও উপমা আমি নিজেই রচনা করেছি। কোনো পরিচিত সাহিত্যকর্ম, কবি বা প্রকাশিত লেখার সাথে এর কোনো মিল পাওয়া যায়নি। অনুমতি ছাড়া এই কবিতার পূর্ণ বা আংশিক অংশ নকল, পুনঃপ্রকাশ বা ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।

মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু

© 12 আগস্ট 2025 Hamidul Islam Raju | আমার ওয়েবসাইট
অনুমতি ছাড়া এই লেখার কোনো অংশ কপি বা ব্যবহারকরা যাবে না।

Post a Comment

0 Comments