গল্পটা একটু সময় নিয়ে পড়েন না হলে আপনার জীবনটাই বৃথা। গল্পঃ মৃত্যুর কাছে ভালোবাসা অসহায়।

 গল্প মৃত্যুর কাছে ভালোবাসা অসহায়

লেখকঃ মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু


মেয়েটা আনমনে টেবিলের পাশে অসম্ভব কল্পনা করছে, 

আর ভাবছে আমি গরীব ঘরের মেয়ে, 

ছেলেটাকে নিয়ে জীবন সাথী করা কী আমার কপালে জুটবে।

এতো প্রাচুর্য অর্থ ও বিত্তশালী পরিবারের ছেলে হয়ে আমার মতো গরীব ফ্যামিলির মেয়েকে এতো ভালোবাসে।

এতো ভালোবাসা কি আমার কপালে জুটবে।

ছেলেটা যদি কোনো দিন আমাকে বিয়ে করে কিন্তু ওর অহংকারী বিত্তশালী বাবা কখনো আমাকে পুত্রবধু হিসেবে গ্রাহ্য করবে না।

বোধহয় আমাদের ভালোবাসা উনি মেনে নিবে না।

তার চেয়ে বরং ছেলেটার সাথে সাক্ষাত করতে হবে।

 এ কথা গুলো রিক্তশূন্য মনে ভাবতে ভাবতে সে দেখতে পেলো ছেলেটা বাইক চালিয়ে ঘরের দিকে দ্রুত গতিতে এসেই  বলল

"কর্ণিকা  এ কয়দিন একটা ব্যাস্ততা থাকার কারণে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। তুমি রাগ করে বসে আছো নাতো?

" (মাথা নাড়িয়ে না  বলছে),   বসো আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে আসতেছি।

" অন্য একদিন  খাবো। তোমাকে তো আগের চেয়ে অন্যরকম লাগছে। আগে তো তোমাকে কখনো বিমর্ষ মুখে দেখি নাই।

আচ্ছা কি হয়েছে বলো

"আগে বলো তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?

"হুম অনেক ভালোবাসি তোমায়।

"আমাদের ভালোবাসা তোমার বাবার কাছে অর্থহীন। আমার মনে হয় উনি কখনো আমাদের ভালোবাসা মেনে নিবেন না ।

তার চেয়ে ভালো হবে তুমি আমাকে ভুলে যাও।

" আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি।তুমি আমার জীবনের একটা অংশ । (কাদোসুরে) তোমাকে ভুলে থাকা সম্ভব না। ভুলবো তো সেদিন যেদিন পূর্ব আকাশে সূর্য উঠবে না,  মহা সমুদ্রে পানি শুকিয়ে যাবে।আর যেদিন এ দেহে প্রাণ থাকবে না সেদিন তোমাকে ভুলে থাকতে পারবো। আমার বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে  আমার ভালোবাসা মেনে নিবেন।

আজই বাবাকে আমার ভালোবাসার কথা বলে দিবো।

একথা বলে ছেলেটি বাইক নিয়ে বাড়িতে চলে গেলো।

চুপিসারে বিছানায় শুয়ে  বিমর্ষ হয়ে ভাবতেছে,

বাবাকি আমাদের ভালোবাসা মেনে নিবেন ,

নাকি কর্ণিকার কথাটি সত্যি হবে।

তাছাড়া আমি কর্ণিকাকে এ জীবনে না পেলে বেচে থাকাটাই বৃথা ।

তার চেয়ে মৃত্যুকে বেচে নেওয়া উচিত হবে ।

ছেলেটার চোখে মুখে পরিস্কার চোখের পানির ছাপ ভেসে ওঠে,  বুকের ভিতর কী যে যন্ত্রণা শুধু সে ছাড়া কেউ বুঝে না।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেও জানে না।

তিন দিন চলে গেলো, মেয়েটির সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কথাটি বাবাকে বলতে পারছে না।

 সেই সাহস নেই। বাবাকে সে বড্ড ভয় পায় ।

এদিকে বাবাও দুদিন ধরে অফিসে  যাবেন না। বুকের ভিতর সাহস আর পরম মনোবল নিয়ে এই সুযোগে ছেলেটা বাবার সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটির কথা বলেছিলো । 

 বিত্তশালী বাবা কখনো তাদের ভালোবাসা মেনে নিবেন না।

ছেলেটা বাবার মুখের কথা অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসলে সত্যি ভেবে নিয়েছিল।

যে মুখে সবসময়ই হাসি লেগে থাকতো, 

সে মুখের হাসিটাই কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেলো। সে এখন  দুষ্টুমি থেকে বিরত, নিরব হয়ে বসে থাকে কারো সাথে যোগাযোগ নেই।

খাওয়া দাওয়া কিছুই  করে না ।

দিন দিন দেহের অবনতি ও ক্রমশ দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ সে মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে এক সাগর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে, 

ছেলেটা বারাক্রান্ত মনে  ভাবে, " জীবনে বাবার কাছে যা চেয়েছি আমি তার সব পেয়েছি, 

অসুস্থ থাকাকালে বাবায় আমাকে দুই বেগ রক্ত দিয়ে আমাকে সুস্থ জীবন দিয়েছেন।

বাবাকে কখনো কান্না করতে দেখি নি, 

 সেদিন সুস্থ হওয়ার পর বাবার চোখে আনন্দের দু ফোটা অশ্রু ঝরেছিল ।

সে থেকে ভেবেছিলাম বাবা আমাকে কতো ভালোবাসেন। আজ আর এসব মনে হয় না।

 বাবা কি সত্যিই  কখনো আমাদের ভালোবাসা মেনে নিবে না। 

যদি মেনে না নেয় আমি আমার জীবন শেষ করে ফেলবো,  ওকে ছাড়া এ জীবনে বেচে থাকাটাই অর্থহীন।

আমি মরে যাবো বলে ছেলেটা হাউ মাউ করে গলা ফাটিয়ে  কাঁদতে শুরু করে ।

 কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটির বাবা রুমে গিয়ে কান্নার কারণ জানতে পারলেন।

ছেলেটির কান্নাতে উনি স্বাভাবিক ভাবে ভেঙে পড়লেন। সে তার বাবাকে পরিস্কার ভাবে বলেছিলো

""আমি আর এ ঘরে থাকতে চাই না ,

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে,

আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা।

আমি কর্ণিকাকে না পেলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো, 

আমি চলে যাচ্ছি ""

ছেলের কথায় বাবা আশ্চর্যম্বিত হয়ে পড়লেন।

ছেলেকে উনি বিষণ ভালোবাসেন ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আছেন এবং এমন কথা থেকে বিরত থাকতে বললেন।

অবশেষে ছেলের সিদ্ধান্তই বাবা গ্রাহ্য করলেন।

কেননা সে বাবার একমাত্র আদরের ছেলে।

বাবার কাছে সম্মতি পেয়ে হাসি মুখে নিজের রুমে গিয়ে মেয়েটিকে  ফোন  দিলো।

মেয়েটিও ফোনের জন্য অধীর অপেক্ষায় অস্থির হয়ে ওঠে।

ফোনে বেশি কথা হলো না,  তবে যতটুকু হয়েছে মেয়েটি খুশিতে আত্মহারা।

সেদিন রাতে মেয়েটি  দু রাকাআত নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছিলো।

ছেলেটিকে নিয়ে সে কল্পনার রাজ্যে চলে গেলো। সকাল হতে না হতেই বালিশের নিচে রাখা মুঠো ফোন বেজে উঠল ছেলেটির নম্বর দেখতেই হৃদয় মন শান্ত হয়ে উঠে, 

ছেলেটি বললো,  "আজ আমাদের সবচেয়ে আনন্দের দিন ,আমি তোমার জন্য  একটা গিফট নিয়ে আসছি বলে বলতেই ফোন কেটে দিলো,

ছেলেটার কী অদ্ভূত অনুভূতি, মেয়েটার সাথে করা চ্যালেঞ্জ সে জিতেছে,

ছেলেটার মা দুবছর আগে মারাত্নক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়  , কিন্তু মায়ের হাতে ছেলের বউমার জন্য শখ করে বিয়ের লাল শাড়ি ও একটা জার্মানি ডিজাইনরত আন্টি আলমারির ভিতরে ক্রয় করে রাখা ছিলো।

সেগুলো কে প্রেমিকার জন্য নিজের সবচেয়ে পছন্দের গিফট হিসেবে হ্যান্ড ব্যাগে ভরে নেয়।

মায়ের কথা মনে করে চোখ থেকে মুল্যবান রুপালী পানি গড়িয়ে পড়ছে,  মা থাকলে আজ ছেলেটা কী যে খুশি হতো,  সে দীর্ঘদিন ধরে মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।

বাবাই তার হাসি আনন্দ চাওয়া পাওয়া পূরণ করেছেন।

 আজ মেয়েটাকে বাবার পক্ষ থেকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে আসবে। কথাটিই ভাবতেই ছেলেটার মন কিছু হলেও আনন্দে নেচে উঠেছে 

সকালের মিষ্টি বায়ূতে কুকিলের কুহু কুহু ডাক ও প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্য আজ খুবই অদ্ভুত লাগছে ছেলেটার সাথে সাথে চারিদিকের  সবকিছু  আনন্দের তালে তালে নাচছে।

ছেলেটি দেরী না করে মেয়েটির জন্য গিফট বেগের ভিতরে ঘুচিয়ে সতেজ মনে  পেরাডো গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিতেই আনমনে তাকে নিয়ে স্বপ্নময় দেশে চলে গেলো।

মেয়েটিকৈ নিয়ে ভাবতে  ভাবতে ওদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই যে, সে  গাড়ি চালাচ্ছে।

সম্মুখদিক থেকে বালুভর্তি ট্রাকের ধাক্কায় তার গাড়িটি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে তাকে বেষ্টন করে  শত শত লোকালয় উপস্থিত হয়ে তার আকস্মিক মৃত্যুতে অনুশোচনা করল।

রক্ত মাখা নিঃশ্বাস বিহীন নিথর দেহটা লুঠিয়ে পড়ে আছে  মাটিতে । মিঠি মিঠি করে সে জীবনের শেষ হাসি হাসছে , প্রাণহীন দেহেতে এ কেমন হাসি। মৃত্যুর পরেও কি ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে পরকালের দেশে চলে গেছে।


বিধাতা প্রমাণ করে দিলেন মৃত্যুর কাছে সবাই  অসহায়, এমনকি ভালোবাসাও।

 ছেলেটার জন্য প্রকৃতি কি নিদারুন কষ্ট আর আহাজারি।নীল আকাশে করুন বেদনাদায়ক কষ্টের  সুরে কুয়াশার মত অল্প অল্প করে বৃষ্টি হচ্ছে।

আজ প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে কাদোকাদো কন্ঠে বেষ্টনরত লোকদের কে সম্বোধন করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ছেলেটা  বলছে, তোমরা দেখে যাও আজ আমার ভালোবাসার জয় হয়েছে ,আমি ভালোবাসার কাছে হেরে যায় নি, কেবল মৃত্যুর কাছে হেরে গেলাম মাত্র।"""

এই খবর মেয়েটির কানে পৌছতেই প্রায়  পাগলপাড়া হয়ে ছুটে চলেছে ছেলেটির শেষ চেহারা দেখার উদ্দেশ্যে।  

মেয়েটি একাকী রিক্তশূন্য মনে অসহ্য যন্ত্রণা বুকের  ভেতর আড়াল করে অবুঝ শিশুর মতো করে কেদেই চলছে মেয়েটির কান্না থামানোর মতো কারো সাধ্য নেই ,,,


মৃত্যুর কাছে ভালোবাসার অসহায়

লেখকঃ- মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু 

 প্রকাশকাল 15/05/2016


Post a Comment

0 Comments